পবিত্র গঙ্গার মর্তে আবির্ভাব ও মহিমা
পার্থপ্রতিম মজুমদার
প্রাচীন কালে সুর্য্য বংশের রাজা সগরের ষাট হাজার পুত্রদের উদ্ধারের জন্য ভগীরথ কঠোর তপস্যা করে পতিত পাবনী গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনয়ণ করেন। ভগীরথ এনেছেন বলে মা গঙ্গার আরেক নাম ভাগীরথী।
গঙ্গার শক্তিশালী বেগ পৃথিবী ধারণ করতে পারবে না, তাই ভগীরথ মহাদেব শিবের তপস্যা করলে, দেবাদিদেব শিব মা ভাগীরথীকে ঝটায় ধারণ করেন। মহাদেব গঙ্গাকে ঝটায় ধারণকরে বিভিন্ন ধারায় পৃথিবীতে প্রবাহিত করান এবং মা গঙ্গা গঙ্গাত্রী হরিদ্বারে, তারপর ত্রিবনী, বারাণসী মা গঙ্গা পৃথিবীর সমতটে আসেন। মর্ত্যে গঙ্গার আসার সময়, ভগবদ্ভক্ত জহ্নু মুনির আশ্রমের ঘর ভেঙ্গেযায়, তার তপস্যায় বিঘœ ঘটায় গঙ্গাকে তিনি এক চুমুকে উদরস্থ করেন। ভগীরথ তার নিকট আকুল প্রার্থনা করলে সন্তুষ্ট হয়ে জহ্নুমুনি জানু দিয়ে গঙ্গাকে বের করে দেন তাই গঙ্গার আরেক নাম হল জাহ্নবী।
কান্ডার নামে একজন পাপী লোক ছিলেন। সারাজীবন সে বেশ্যাদের সেবা করত। একদিন এক বেশ্যার কথায় কাঠ কাটতে বনে যায় কান্ডার। হটাৎ এক বাঘ তার ঘার মটকে মেরে ফেলে। যমদুত এসে তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছিল যমের ঘরে। বাঘ মাংস খেয়ে নিলে বনের মধ্যে অস্থি পড়ে থাকে। কাক ও চিলের কাড়াকাড়িতে অস্থি গঙ্গায় পড়ে যায়। গঙ্গার পরশ লাগার সাথে সাথে স্বর্গের দূতেরা এসে কান্ডারকে স্বর্গে নিয়ে যান। কান্ডার পাপমুক্ত হয়ে স্বর্গে যান।
যমদুতরা যমরাজের কাছে গিয়ে বল্লেন, কান্ডার মহাপাপী, এত পাপ করে সে তো নরকে আসার কথা, কেন সে স্বর্গে গেল, তার কোন গুণে সে স্বর্গে গেল। যমদুতদের কথা শুনে যম গেল শ্রীবিষ্ণুর কাছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে।
যম বলল- ‘প্রভু পাপীর উপর আমার অধিকার এটা কি হলো প্রভু, কান্ডারের মতো মহাপাপী হয়েও স্বর্গে গেল’।
যমের কথা শুনে অচ্যুত ভগবান হাসতে বল্লেন
-এটা গঙ্গার মহিমা। গঙ্গা যেখানে প্রবাহিত হয় সেখানে কোনো পাপ থাকে না। মন দিয়ে শুন যম গঙ্গা মহিমা। গঙ্গার বাতাস যতদূর যাবে ততদূর যম তোমার পাশের কোনো অধিকার নেই, এটা আমার কথা। যে গঙ্গার জল পান করে তার শরীর আমার সমান। তুমি তোমার দুতদের সেখানে যেতে মানা করবে, সেখানে আছে পতিতপাবনী গঙ্গার পরশ। এইজন্য মৃত্যুর পর শবদেহ দাহ করে তার অবশিষ্টাংশ ও অস্থি ভস্ম গঙ্গায় ছড়িয়ে দিতে হয়, মৃত্যু ব্যক্তির আত্মার পারমার্থিক উন্নতির জন্য।