ইউসুফ শরীফ
জগন্নাথ হলের পুরনো অ্যাসেম্বলি হাউসের ছাদে ১৯৭২ সালের কোন এক বিকেলে- দু’পাশে ইংরেজি বিভাগের দু’জন এবং মাঝখানে বাংলা বিভাগের দু’জন-বা’দিক শামসুল ইসলাম, আমি, পবিত্ররঞ্জন সরকার এবং দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান চাকমা। এরকম বহু অন্তরঙ্গ সময় কেটেছে আমাদের দেশি-বিদেশি সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তুমুল আলোচনায়। ভিন্ন ধারার রোমান্টিক কবি দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান চাকমা [তার বেশ কিছু কবিতা একাধিক বিদেশি ভাষায় অনুদিতও হয়েছিল। প্রথম কবিতার বইটি অনেকটা জোর করেই প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলাম] চলে গেছেন না ফেরার দেশে। চমৎকার গণমুখি কবিতা লিখতেন পবিত্ররঞ্জন সরকার। ডাক বিভাগের চাকরিতে ঢাকা বদলি বাইরে চলে যাবার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন-কয়েক বছর আগে ফোনে একদিন যোগাযোগের পর আবার বিচ্ছিন্ন। পরবর্তীতে তার কোন কবিতা প্রকাশিত হয়েছে, এমন চোখে পড়েনি। শামসুল ইসলাম ছিলেন তখন আমাদের কাছে বিদেশি সাহিত্যের সমৃদ্ধ এক জানালা বিশেষ। সত্তরের শেষদিকে আজাদ-এর সাহিত্য পাতায় বোরিস পাস্তারনকের ‘ডক্টর জিভাগো’র সাবলীল অনুবাদ শুরু করেও শেষ করতে পারেননি, সরকারি চাকরির ব্যস্ততার জন্যই হয়ত। দেশি-বিদেশি সাহিত্যের মননশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমৃদ্ধ অনুবাদ-কর্ম তার কাছ পেতে পারতাম আমরা। কখনও কখনও ফোনে কথা হয়-কালেভদ্রে দেখাও হয়-তাগিদও দিই। আবেগ-উদ্দীপনার ঘোরলাগা বাহাত্তরের সেই দিনগুলোতে কি আর ফিরে যাওয়া যায়!
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক ও কবি/ফেসবুক থেকে