মাহে রমজানের প্রস্তুতি
মিযানুর রহমান জামীল
সময় নদীর স্রোতের ন্যায় বহমান, কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়নির্ভর যে কাজ নির্দিষ্ট সময়ে করা হয়নি তার শূন্যতা কোনো দিনও পূরণ হবে না। তাই মানবজীবনে সময়ের মূল্যায়ন অনেক বেশি। আর মাহে রমজান হলো বনী আদমের সাফল্যময় জীবনে পৌঁছার মোক্ষম সময়। পবিত্র কুরআনের রমজান মাসকে খেতাব করে সূরা জুমআর ৪ নং আয়াতে আলাহ তাআলা বলেন ‘উহা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।’ কারণ এ মাস তাকওয়া পরহেজগারীর বার্তা নিয়ে আসে। যে তাকওয়া অর্জন করতে সক্ষম হবে সে লাভ করবে পরকালের সুখ-শান্তি।
দুনিয়াতেও মানুষ একটু শান্তিতে জীবন কাটাতে চায়। তারপরও আলাহর হুকুমের বিপরীত থেকে কিছু মানুষের পদ্ববিচ্ছুতি স্বাভাবিক। দুনিয়াতে যা কিছু ভাল-খারাপ আখিরাতে তার ফলাফল আবশ্যক। মানুষ থেকে নিয়ে জীব-জন্তুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। যারা ভাল কাজ করবে এবং দীন-ধর্মের প্রতি দায়িত্বপরায়ণ হয়ে মানুষের উপকারে সর্বাত্মক এগিয়ে আসবে, দুনিয়ায় ঈমানের স্বাদে বসবাস করার পাশাপাশি আখিরাতেও রয়েছে তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ।
দুঃখের বিষয় হলো, আমরা জান্নাতে যেতে রাজি কিন্তু জান্নাত অর্জনের যে নিয়ম-পদ্ধতি বাদলে দেয়া হয়েছে আমরা তার ধারে কাছেও নেই। নামাজ না পড়লে কী শাস্তি তা সকলের জানা, এরপরও অনেককেই নামাজের প্রতি গাফেল হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। রোজা রা রাখলে কী ক্ষতি? এটা জানার পরও দিবসে লাল পর্দা টানিয়ে রেস্টুরেন্টে অনায়াসে ভোজের আয়োজন। হজ জাকাতের অবস্থাও প্রায় একই রকম। অথচ ইসলামের এই পাঁচ রোকন মুসলমানের একমাত্র জীবন বিধান। এরপরও প্রতি বছর রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে রমজান আসবে, কারণ ‘রোজা মুমিনের জন্য ঢাল সরূপ’। আর যারা প্রকৃত মুমিন তারা এটার যথাযথ মূল্যয়ন করবে। যারা রমজানের শিক্ষা নিতে ভুল করবে ক্ষতি তাদেরই হবে, পক্ষান্তরে রমজান তার আপন গতিতে প্রতি বছর মুত্তাকীদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে হাজির হবে। এভাবেই কেয়ামত পর্যন্ত চলবে, আর নশ্বর পৃথিবীতে দু-দিনের মুসাফির একদিন বেশি হায়াত পাবে না। আর কবরে যাওয়ার পর কোনো মানুষ দুনিয়াতে আসতে পারবে না। এরপরও কীভাবে আল্লাহ বিমুখ হয়ে এই দুনিয়ার রং-তামাশার ছলে পড়ে খোদার বিধান থেকে আমরা সম্পূর্ণ গাফেল হয়ে যাই!
আমার নাম, ডাক, বংশ, শাসন, শোষন, রাজ দরবার, সুনাম সু-খ্যাতি সব কিছু পড়ে থাকবে মাটির পৃথিবীতে। একসময় আমি সবার মন থেকে মুছে যাব। আমার কবরে নেক আমল পৌঁছানোর মতো কেউ রবে না। দুনিয়াতে আমার নাম নিশানা বাকী থাকবে না। মৃত্যুর পরে আমার পরিবার কয়েকদিন শোকে কাতর থাকবে, এরপর কেউ আমার গোরস্তানের দিকে ফিরেও চাইবে না। অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি এবং সময়ের স্রোত কবরকে নিঃচিহ্ন করে দেবে। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে। কেউ কারও চিন্তা করার প্রয়োজনবোধ করবে না। এই বেদনাদায়ক মুহূর্ত মৃত্যুর পর আমাদের জন্য অপেক্ষমাণ। কেউই এ সময়চক্র থেকে খালী থাকবে না। সুতরাং আমাকে আমার জান্নাত বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া বিধান পালনে তৎপর হওয়ার মধ্যেই চির কল্যাণ নিহীত।
আল্লাহ তাআলার ঘোষণা ‘প্রত্যেক জীবকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ কেউ এর থেকে নিস্কৃতি পাবে না। পৃথিবীর বড় বড় শক্তি, যাদের শরীর ছিল পাহাড়ের মতো, শক্তি ছিল কয়েক যুবকের, ক্ষমতা ছিল আকাশচুম্বী, তারাও তো আজ কবরে গিয়ে অসহায়। আর আমরা! উচ্চতায় তাদের মতো না হলেও ক্ষমতা, শক্তি, বড়াই তাদের চেয়ে কম নয়। সামান্য এক ফোটা পানি থেকে সৃষ্টি হওয়ার পরও আমাদের কিসের এতো অহংকার, কীসের এতো গরীমা! আমরা তো এসেছি কিছু দিনের জন্য। এই দুনিয়া তো আজীবনের জন্য নয়, অল্প কিছু দিনের। একদিন তো এর সামাপ্তি ঘটবে, আর প্রকৃত জীবন হলো পরকাল। যার এই দুনিয়া ভাল হবে কিন্তু পরকাল ভাল হবে না সে চরম দুর্ভাগা। যার দুনিয়া বিপদ-আপদ মুসীবতের হবে কিন্তু পরকাল হবে সুখের, সেই প্রকৃত সুখী। এর জন্য আলাহ তাআলার নির্দেশিত পথ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
তাই আল্লাহর বিধানের পরিপূর্ণ মূল্যায়ন অপরিহার্য। যেমন, নামাজের সময় নামাজ পড়া, রমজান মাস এলে রোজা রাখা, হজ্বের সময় বাইতুল্লাহর জিয়ারত করা, জাকাতের সময় জাকাত প্রদান করা সর্বপরি এগুলো আদায়ের পর তাকওয়া পরহেজগারী অর্জন হলে সে প্রকৃত মুমিন। কারণ রমজান মাস তাকওয়া অর্জন এবং পাপ বর্জনের মাস। তবেই একজন মানুষের পরকালে জান্নাত লাভ করা সম্ভব। পবিত্র মাসে রমজানের উছিলা যেন আমাদের জন্যও মুক্তি এবং কামিয়াবির কারণ হয়। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।