আহলান সাহলান মাহে রমজান
মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
বছর ঘুরে আবার এলো মাহে রমজান। মাহে রমজান একমাস রোজা পালন করা ফরজ, এই মাসেই নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। তাই এই মাস হয়ে ওঠেছে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। বিশ্ব-মুসলিম এ মহান মাসকে অভিবাদন জানায় খোশ আমদেদ মাহে রমজান। সিয়াম বা সওম আরবি শব্দ, এর শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা, পরিহার করা। শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিকের পূর্ব মুহূর্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, কামাচার প্রভৃতি থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম বা রোজা। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন ‘তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)।
রমজানের আগমনী বার্তা সবার মাঝে আনন্দ-উৎসবের আবহ সৃষ্টি করে। রমজানের চাঁদ দেখা থেকে এ আনন্দের সূচনা হয়। সারা মাস সিয়াম-সাধনা, সাহরী-ইফতার ও তারাবির নামাজ জামাতে আদায়, জিকির-আজকার ইত্যাদি ভালো কাজ সম্পাদনে সবার অংশগ্রহণ সমাজে এক জান্নাতি পরিবেশ সৃষ্টি করে। অন্তত এই মাসে সবাই কুরআন তেলাওয়াত ও ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়ায় অধিক মনোযোগী হয়। আর বেশিবেশি দানখয়রাত করে। যারা সামর্থ্যবান তারা দুঃখীদের সাহায্য ও জাকাত দিয়ে তাদের অভাব মোচন করে। সেদিক থেকে রমজানের বিরাট প্রভাব রয়েছে।
রোজা অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে মানুষের দৈহিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধি পরিপূর্ণভাবে সাধিত হয়। কারণ, শুধুমাত্র পানাহার ত্যাগ করলেই রোজা পালন হয় না; সেই সঙ্গে সর্বপ্রকার অবৈধ কাজ, কথা ও ব্যবহার থেকেও আমাদের বিরত থাকতে হবে। পবিত্র মন নিয়ে পবিত্রভাবে রোজার যাবতীয় আদব রক্ষা করতে হবে। তা না হলে ক্ষুধা-তৃষ্ণার যন্ত্রণা ভোগ করা ছাড়া আর কিছুই জুটবে না।
রোজা পালন করার মাধ্যমে একজন মানুষ সত্যিকার মানুষরূপে নিজেকে গঠন করতে পারে। রোজা পালনের মাধ্যমে ধনীরা দরিদ্র-ক্ষুধার্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা অর্জন করে লোভ-লালসা থেকে মুক্ত হয়; সহমর্মিতা ও ধৈর্যের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়। প্ররোচনা ও শয়তানের প্রতারণা হতে বাঁচার দিক-নির্দেশনা দেয় রোজা। রোজা হচ্ছে মুত্তাকীদের জন্য লাগাম স্বরূপ। রোজা মানুষের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সবধরনের বিনষ্টকারী কাজ থেকে বিরত রাখে। বিরত রাখে সর্বপ্রকার পাপ এবং পঙ্কিলতা থেকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ। তাই তোমাদের যে কেউ রোজা রাখবে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে আর শোরগোল বা উচ্চবাচ্য না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা কটু কথা বলে অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে দেয়, ‘আমি রোজাদার’। (বুখারি: ১৯০৪)।
রোজা শারীরিক শক্তির হেফাজতের সহায়ক একটি মাধ্যম। রোজা সামাজিকভাবেও বেশ ভূমিকা রাখে। গড়ে তুলে তাকওয়াপূর্ণ পরিবেশ। মানুষের মনে সৎ ও সুন্দরভাবে চলার প্রেরণা জাগে। তাওবা, ভয় এবং আল্লাহ-প্রেমের প্রতি স্বাভাবিক প্রবণতা সৃষ্টি হয়। সুতরাং আমরা যদি রমজানের সিয়াম-সাধনার পূর্ণ বাস্তবায়ন আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের গোটা জীবনকে তাকওয়াপূর্ণ করতে পারবো, হতে পারবো আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহ এ মাসের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক: শিক্ষাসচিব, বাইতুন নূর মাদরাসা ঢাকা।.