ওয়াহিদুজ্জামান: বেশ কিছুদিন ধরে দেশের ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় অফিসগুলোয় মাত্রাতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কয়েক স্তরে গড়া এই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সাধারণ গ্রাহকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কী কারণে, কাদের হাত থেকে রক্ষা করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় এই ধরনের ব্যায়বহুল নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থাÑ তা কেউ বলতে পারছেন না।
দেখা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় অফিসের প্রধান ফটকে অসংখ্য সুসজ্জিত নিরাপত্তা প্রহরী থাকে যাদের অনুমতি নিয়ে, খাতায় এন্ট্রি করে, নিরাপত্তা ডিভাইসের মধ্য দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে আসা গ্রাহকদের বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা প্রহরীদের কাছে কী কী কারণে, কার কার কাছে যাওয়া হবেÑ ইত্যাদি ব্যাখ্যা দিয়ে সন্তুষ্ট করে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মেলে। তারপর কেন্দ্রীয় অফিসের ভেতরে প্রত্যেকটি সেকশনের বাইরে মূল গেইটে থাকে আর এক স্তরের নিরাপত্তা প্রহরী। সেখানেও খাতায় এন্ট্রি করে, যথাযথ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। অতঃপর যার কাছে যাওয়া হবে তার রুমের সামনের থাকে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী। তাদের মাধ্যমে কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাওয়া যায়।
গ্রাহকরা বলছেন, এই ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় তারা চরমভাবে বিভ্রান্ত। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আসার নানা গোপন বিষয় থাকে, যা সবার সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। তা ছাড়াও নিরাপত্তা কাজে ভাড়াটিয়া প্রহরীরা প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকে যা তাদের কাছে খুবই অসম্মানজনক। এ ছাড়াও ভুক্তভোগী অনেক গ্রাহক বলেছেন, ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে চুরি-ডাকাতি-রাহাজানির ঘটনা এতই কম যে এর জন্য এত ব্যয়বহুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সাধারণত এইসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয় অভ্যন্তরীণ শীর্ষ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। ফলে এই মাত্রাতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সেসব লুটেরাদের স্বাভাবিক চলাচল ও রক্ষার জন্য করা হয়েছে কি না, তাই বা কে জানে। তবে এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, আসলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাড়াবাড়িমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং সকল শ্রেণির গ্রাহকরা যেন স্বাচ্ছন্দে প্রতিষ্ঠানে বিনা বাধায় চলাচল করতে পারে এর ব্যবস্থা রাখা জরুরি।