মিসওয়াকের উপকারিতা
মিযানুর রহমান জামীল : মানবজীবনে সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। সুন্নত ছাড়া উম্মত পাড়ার ঈমান-আমল রয়ে যায় অসম্পূর্ণ। ইসলামি শরীয়তে সুন্নতে নববীর অনুসরণ উম্মতের জন্য অপরিহার্য। হাদীসে এসেছে ‘যে ব্যক্তি শেষ যামানায় একটি সুন্নত জিন্দা করবে সে এক’শ শহীদরে সওয়াব পাবে।’ সুন্নতের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে মিসওয়াক একটি মূল্যবান সুন্নত। হাদীসে সুন্নতটির কথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। এ মিসওয়াক সম্পর্কে মেডিকেল সাইন্স তথা বিভিন্ন ডাক্তার ও দার্শনিকদের রয়েছে দুরদর্শী ভাবনা। রয়েছে ইতিবাচক দৃিষ্টভঙ্গি।
বর্তমান বাজারে অনেক ধরণের মিসওয়াক পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নিম, যাইতুন, সাজারাতুল আরাক, এটার অন্য নাম পিলু। এখন সৌদি আরবসহ বিশ্বরে সবখানে পিলু মিসওয়াক পাওয়া যায়। বাংলাদেশে পিলুর মতোই প্যাকিং ছাড়া এ মিসওয়াক বিক্রি করতে দেখা যায়। পিলুর মতো যাইতুন এবং নিম এর ডালও অনেক উপকারী। তবে যে গাছের-ই ডাল হোক, যদি সেটাকে রাসূল সা. এর সুন্নত মিসওয়াক হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে সত্যিকারার্থে মিসওয়াকের ছওয়াবে তার মধ্যে কোনো কমতি হবে না। এজন্য এটাকে পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তে ওযুর গুরুত্ব দিয়ে রাসূল সা. ইরশাদ করেন ‘আমি আমার উম্মতের উপর যদি কষ্ট মনে না করতাম তবে তাদের ওপরে মিছওয়াক কে ফরজ করে দিতাম, যেমনি ফরজ করেছি ওযুকে।’ [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৫৬৫৬, বোখারী শরীফ, হাদীস নং-৮৮৭, সুনানুন নাসাঈ, হাদীস নং-৩০২, মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩১]
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য অনেকে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়। অথচ বাড়ির আশ-পাশের মিসওয়াক বানানো যায় এমন গাছ-গাছালী আমাদের না জানার কারণে অব্যবহৃত রয়ে যায়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মিসওয়াক আল্লাহর সন্তষ্টি ও মুখের দুর্গন্ধ দূরিভুত হওয়ার মাধ্যম।’ [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-৬২, ২৪৩৩২, দারেমী, হাদীস নং-৭১১, মুসান্নাফ ইবনে আবি সাইবা, হাদীস নং-১৭৯২, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৮৯, মুসনাদুস শাফেঈ, হাদীস নং-৭১, সুনানুন নাসাঈ, হাদীস নং-৫, ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৩৫] [ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১০৬৮, মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-২৭৬, ৭৪৯৬] রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস রা. মিসওয়াক রে ১০-টি গুণ বর্ণনা করেছেন ১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। ২. শয়তানের অসন্তুষ্টির কারণ। ৩. ফেরেশতারা আনন্দিত হয়। ৪. দাঁতের মাড়ি মজবুত (দাঁতের আটাজাতীয় ময়লা দূর) হয়। ৫. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। ৬. দৃষ্টি শক্তি তীক্ষè হয়। ৭. মুখে সুগন্ধি আনে। কফ ঘ্রাস করে (কেটে ফেলে)। ৮. এটা রাসুলের সুন্নত। ৯. নেক-আমল তথা সওয়াব বৃদ্ধি করে। [সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪১৬০] হাদীসে আরও বর্ণিত হয়েছে ‘রোযাদার ব্যক্তির সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ গুণ হলো মিছওয়াক করা।’ [মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৪২]
একটি সাধারণ কাজ, যা সহজ-সরলভাবে করা যায়, অথচ এ সুন্নতটির প্রতি রয়েছে আমাদের চরম অবহেলাা। হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘তোমরা মিছওয়াক থেকে উদাসীন হয়ো না; কেননা তাতে বহু গুণাগুণ রয়েছে।’ আলামা জালালুদ্দিন সূয়ুতি রহ. ‘শরহুছ ছুদুর’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ‘মিসওয়াক করার বরকতে মৃত্যুর সময় রুহ সহজে বের হয়। এর প্রমাণ হলো রাসূল সা.ও মৃত্যুর পূর্বে মিছওয়াক করেছিলেন। এছাড়াও মিছওয়াক করার দ্বারা, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন হয়। মিছওয়াককারী বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার হয়ে যায়। নামাযের আগে মিছওয়াক করলে নামাযের ফযীলত ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। স্বচ্ছলতা বয়ে আনে।
মেডিকেল সাইন্সে মিসওয়াকের উপকারিতা
মিসওয়াক করার দ্বারা কিডনীর পাথর প্রতিরোধ হয়। থাইরাইড গান্ডরে আক্রান্ত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। গভীর অধ্যাবসায় সুè ভাবনার প্রতিফলন ঘটে। মুখের সৃষ্ট তো নিরাময়ের কারণ। এলার্জি দূরিভুত হওয়ার মাধ্যম। সন্তুষ্টির প্রতি দয়া-মায়া ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। মুখের ব্রুণ ও কালো দাগ মুছে ফেলে। ঘুমের মধ্যে সৃষ্ট শ্বাস-প্রশ্বাসে রোগ প্রতিরোধ করে। দেহ সতেজ রাখে। মাথা ব্যথা দূর হয়। মস্তিস্ক সতেজ ও সহায়ক হয়। দাঁতের ব্যথা দূর হয়। দাঁতের শুভ্রতা ও উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়। দাঁত শক্ত হয়। ফেরেশতা নূরানী চেহারায় মুসাফাহা করে। মাথা ঠা-া রাখে। চুলের গোড়া শক্ত হয়। চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি পায়। গলায় মাংসপি- বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। রক্ত পরিষ্কার রাখে। সর্দি-কাশি নিরাময়ে ফলপ্রসূ হয়। হৃদপি- ব্যধির উপকারিতা। পাকস্থলীর কার্যকর ভালো থাকে। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। বাকশক্তি সুন্দর ও আর্কষণীয় হয়। স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়। নেকী বৃদ্ধি পায়। শরীরের অতিমাত্রার তাপ বা আদ্রতা দূর হয়। শরীর ইবাদতের উপযোগী হয়। সর্ব প্রকার ব্যথা দূর হয়। পিঠ মজবুত হয়। জ্বর থাকলে কমে যায়। জিহ্বা তেজস্বী হয়। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্তানাদি নেক ও ভদ্র হয়। ফেরেশতাগণ মিসওয়াক কারীকে দেখে বলতে থাকে- ‘ঐ ব্যক্তি নবীগণের অনুসারী।’ মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ এমন আকৃতিতে আসেন যেমন আকৃতিতে নবীগণের কাছে আসতেন। মুখের জড়তা, তোতলামি, বাকরুদ্ধতা দূর হয়। যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত মিসওয়াক কাশি দূর করে। যাদের শরীরে ও মাথায় চুল এবং পশম নেই মিসওয়াক করার ফলে সেখানে চুল ও পশম গজায়। শরীরের রং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়। শয়তানের ওয়াস ওয়াসা দূর হয়। নিয়মিত মিসওয়াকের দ্বারা দাঁতের হলুদবর্ণ দূর হয়। দাঁত সাদা ও ধবধবে উজ্জ্বল হয়। জান্নাতে মিসওয়াক কারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মৃত্যুর সময় কালিমা নসীব হয়।