ভুল তথ্য ও গুজব প্রচারও ভয়াবহ গীবত!
মো. এবাদুর রহমান শামীম : বর্তমান যুগ অবাধ, তথ্যপ্রবাহের যুগ। ইন্টারনেটের কল্যাণে পৃথিবীর সব তথ্যভা-ার আমাদের সামনে উন্মুক্ত। তদুপরি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথ্যের প্রবাহকে আরও সহজ করে দিয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে তা পৌঁছে যাচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন ও এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অর্থনীতি, গ্রামীণ ও নগর কৃষিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানুষ সুফল পাচ্ছে ঠিকই- তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। এটা গভীর চিন্তার কথা। অন্যদিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিনিয়ত নামে-বেনামে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। ফেসবুকের সহায়ক হিসেবে রয়েছে- ম্যাসেঞ্জার, ইউটিউব চ্যানেল, ইমো, হোয়াটস অ্যাপ এবং আরও অনেক কিছু।
এসব কিছু মাঝে কিছু অনলাইন পোর্টাল মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ, রাজনৈতিক মতভেদ এবং ব্যক্তি, পারিবার ও সামাজিক সম্পর্কের টানাপোড়েনকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ভুয়া, চটকদার, রসালো, উস্কানিমূলক ও বিকৃত নিউজ, ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করছে। আর নেটিজেন দুনিয়ার সৈনিকরা এসব নিউজের সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করে লাইক, শেয়ার, কপি ও ট্যাগের মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মহান দায়িত্ব পালন করছে! অনেকে প্রতিপেক্ষর চরিত্র হনন, কলঙ্ক লেপন, ধর্মের অপব্যাখা, ধর্মানুভূতিতে আঘাত, তথ্য বিকৃতি এবং গুজব রটানোর জন্য এসবকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
কারও কারও ভাবখানা এমন, যেন এর মাধ্যমে দুনিয়া-আখেরাতের অশেষ নেকি হাসিল করছেন। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা এটা বিবেচ্য বিষয় নয়। স্বার্থ হাসিল, মত-পথ কিংবা দর্শনের সঙ্গে মিলে গেলেই কেল্লাফতে। শুরু হয় স্ট্যাটাস, লাইক, শেয়ার, কপি, ট্যাগ, সেন্ড আর আমিন ঝড়! অথচ প্রত্যেকটা নিউজ লাইক, শেয়ার, কপি ও ট্যাগের মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পূর্বে এর সত্যতা যাচাই করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। ফলে নষ্ট হচ্ছে- সম্পর্কের সুদৃঢ় বন্ধন। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে জাতীয় রাজনীতিতেও।
অথচ প্রত্যাশা ছিলো, সব বিতর্কের বেড়াজাল ছিন্নকরে নেটিজেন দুনিয়ায় কল্যাণকর ও নিরাপদ তথ্যের অবাধ বিচরণ থাকবে, তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হবে না মানুষ- এটাই সবার প্রত্যাশা। তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রসার ও প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে নেটিজেন ও সিটিজেন বিকৃত তথ্য ও গুজব প্রচার পাপের কাজ ওয়ার্ল্ডের গর্বিত সদস্য হিসেবে সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য বাড়ছে। কোনো নিউজের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে প্রচার থেকে বিরত থাকা উচিত। অনলাইনে যথাযথ সত্যতা অনুসন্ধান ছাড়া তথ্য প্রচার পূর্বেও জন্ম দিয়েছিল অসংখ্য সহিংসতার এবং এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করলে অদূর ভবিষ্যতে ঘটতে পারে আরও অঘটন। তথ্য প্রচারে একটু অসতর্কতা বহু নির্দোষ মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অমূল্য বন্ধন এবং রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক ও সচেতন হওয়া সময়ের দাবি।