মাছুম বিল্লাহ: ‘বাংলাদেশি’ হিন্দুদের নগরিকত্বের উদ্যোগের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের আসাম। ভারতে মোদির সরকার নাগরিকত্ব (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ১৯৫৫ সংস্কার করে হিন্দু বাংলাদেশীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য ভারতের একটি পার্লামেন্টারী কমিটি আসাম সফরে রয়েছেন। কিন্তু এই উদ্যোগের বিপক্ষে অবস্থানকারী অসমীয়ারা বিক্ষোভ করছেন। একই সঙ্গে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ণের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচী পালন করছেন। এ নিয়ে উত্তাল হয়ে পড়েছে আসাম।
এ সংশোধনীর বিরোধিতা করে আন্দোলনরত অসম গন পরিষদ (এজিপি) বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকার যদি বিলটি পাস করার উদ্যোগ নেয়, তবে তারা রাজ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে বের হয়ে যাবে। কংগ্রেসেও এই বিলের বিরোধিতা করেছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈই সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজ্য বাংলাদেশ থেকে আর কোনো অভিবাসীর বোঝা বহন করবে না।
বিলটির বিরোধিতা করে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ) নেতারাও বলেছে, বিলটি পাস হলে তারা বিক্ষোভের আয়োজন করবে। বিলটি পাস হলে আসামীয়রা তাদের নিজেদের ভূখ-েই সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।
আদিবাসী ফোরাম আসাম (কয়েকটি সংগঠন নিয়ে এটি গঠিত) এই বিলের বিরোধিতা করে বলেলে, তারা একে অসাংবিধানিক মনে করে।
আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ বলেছেন, আসামীয়রা কি তাদের নিজ রাজ্যে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে? আসামের সরকারি ভাষা কি বাংলা হয়ে যাবে? এ নিয়ে আসামে ব্যাপক ভীতি কাজ করছে। তবে বিজেপি ও আরএসএসসহ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন এই বিলের বিরোধিতা না করার জন্য নানাভাবে উৎসাহ দিচ্ছে।
অখিল গগৈই বলেন, সাবেক গভর্নর এস কে সিনহার নেতৃত্বে গঠিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৭১ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত ৭৫ লাখ বাংলাদেশী হিন্দু আসামে প্রবেশ করেছে। এই বিলটি পাস হলে তারা সবাই আসামের নাগরিক হয়ে যাবে। তাদের ধর্ম যাই হোক না কেন, তারা তো সবাই বিদেশী। তারা আসামে এসেছে ১৯৭১ সালের পর তাদেরকে চিহ্নিত করে বহিস্কার করা উচিত। বিলটির বিরোধিতা করে অনেক সংগঠন রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বনান্দ সনোওয়াল ও অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। ইতোপূর্বে শর্মা বলেছিলেন, আসাম যাতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য হিন্দু বাংলাদেশীদের আসামে বসতি স্থাপন করানো উচিত।
অন্যদিকে অসামের বাঙালীরা এই সংশোধনীর বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্টারী কমিটির কাছে আবেদন করেছেন। এ জন্য তারা অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচিও পালন করছেন।