মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে : ভাবা যায়, যার রাজনৈতিক জীবনেরই ব্যাপ্তি ৭০ বছর, বয়স ৯৩ ছুঁই ছুঁই করছে এবং আধুনিক মালয়েশিয়া গড়ার মহানায়ক ও দিশারী এবং এখনও আপন মহীমায় জাতিকে দিশা দেয়ার চেতনাটি যার হারায়নি। বলা হচ্ছে, মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী, যিনি ওই পদে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পুনর্নির্বাচিত হয়ে পৃথিবীর সুদীর্ঘ আয়ুর জনসেবী নেতা। নামের আগে তার রাষ্ট্রীয় সম্মানে মালয় ভাষায় উচ্চারণ করা হয়Ñ ‘ইয়াং আমাত বারবাহাজিয়া তুন’! একইসঙ্গে মেধাপূর্ণ কৃতিত্ব বিবেচনায় রাজ পরিবারের উপাধি ‘এসএমএন ডিকে’ রয়েছে, যা মালয় ভাষায় ‘ডাইপলিহারাকান আল্লাহ-প্যাংকুয়ান নিগারা’। সেই মাহাথির বিন মোহাম্মদ, যিনি তীব্র নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় দশকের কোয়ালিশন শাসনের অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার আবারও ক্ষমতাসীন হয়েছেন। পরাভূত করেছেন ৯ বছরের দুর্নীতিপরায়ন ‘ওয়ান এমডিবি’ খ্যাত প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাককে।
ইতোপূর্বে মাহাথির বিন মোহাম্মদ দেশটিতে ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২২ বছর পাঁচবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেসময়ে মালয়েশিয়া শুধু অভূতপূর্ব উন্নয়ন জোয়ারে এগিয়ে যায়নি, বরং দ্রুত সমৃদ্ধশালী হয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ে ডাক্তার হয়েছিলেন বটে, কিন্তু নিয়তি মাহাথিরকে রাজনীতিতে ডেকে নেয়। তাতে ছিল চড়াই-উৎরাই। ১৯৬৪ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে বিরোধী ঐক্যজোট ‘ইউনাইটেড মালায়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন’-এ যোগ দেন। ওই এক টার্মেই রফাদফা, পুনর্নির্বাচিত হতে পারেননি। ঘটনাক্রমে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আবদুল রহমানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন। পরে টুঙ্কু পদত্যাগ করলে তিনি দলে যোগ দেন এবং মন্ত্রিপরিষদে জায়গা করে নেন। পাশাপাশি ১৯৭৬ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী হোসেন উনের উত্তরসূরী হন। কিন্তু তার এই রাজনৈতিক আধিপত্য ও উত্থানের পেছনে রয়েছে মালয়েশিয়ার রাজ পরিবারের ঐতিহ্যগত প্রতিপত্তি ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও অপরাপর বহু দেশের প্রভাব বলয় পেরিয়ে জাতীয় চেতনাবোধটিকে উজ্জীবিত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে তৃতীয় বিশ্বের জন্য হয়েছেন একজন পথপ্রদর্শক।
তবু এবার মাহাথিরের বয়সগত কারণে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। যখন বিজয় ঘোষণাটি আসে, সবার অবিশ্বাসটি কেটে যায়। গণমাধ্যমে সেই অনুভূতিটি কেউ জানিয়েছেন, ‘আমরা আনন্দিত, এটি মালয়েশিয়ার জন্য গর্বের দিন’; আবার কেউ বলেছেন, ‘এমন বিজয়ের জন্য ৬০ বছর অপেক্ষায় থেকেছি। এটা এক অত্যাশ্বর্য ঘটনা। মাহাথিরের ভক্ত না হয়েও বলছি, একমাত্র তার পক্ষেই এ বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে’। এই অভিব্যক্তিপূর্ণ উদাহরণগুলো থেকে আমরাও চাইবো তেমনি অনুভূতির কলকাকলী যেন আমাদের নির্বাচনে থাকে; যেখানে মানুষ তার ভোটাধিকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রয়োগ শেষে ফলাফল ঘোষণায় অন্তত এটুকু বলবে, ‘আজ বাংলাদেশের জন্য গর্বের দিন’! কেননা বুকভরা প্রশান্তির সেই নিঃশ্বাস নেওয়াটা সকলেরই বড় দরকার।
ই-মেইল: bukhari.toronto@gmail.com