পাহাড় ফের রক্তে লাল
ওয়াসিম ফারুক
সবুজ পাহাড় শান্ত পাহাড়, কিন্তু প্রায়-ই আমাদের সবুজ পাহাড় রক্তে হয় লাল শান্ত পাহাড় উঠে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে অশান্ত । অতি সম্প্রতি আবার আমাদের সবুজ পাহাড় রক্তাক্ত হয়েছে, পাহাড়ে উকি দিচ্ছে অশান্ত রূপ । গত ৩ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন থানা দেড়শত গজের ভিতর । ঠিক এর এক দিন পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়ার পথে ফের দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিস ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) আহবায়ক তপন জ্যোতি চাকমা, জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির (এমএন লারমা) নেতা সুজন চাকমা এবং যুব নেতা তন্ময় চাকমা সহ পাঁচ জন । এই ঘটনার পর থেকেই পুরো পার্বত্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। পার্বত্য জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ এর মধ্যে বিরোধ অনেক পুরনো । ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির পর থেকেই ভাঙন আর মতাদর্শিক বিভক্তি দেখা দেয় পাহাড়ে। শান্তিচুক্তির পর পর ই ভাঙ্গনের কবলে পরে সন্তু লারমার জেএসএস । প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে গঠিত হয় ইউপিডিএফ আর মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে জেএসএস সংস্কারপন্থী গঠিত হয়। ১৫ নভেম্বর-২০১৭ ইউপিডিএফ ভেঙে গঠিত হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) যার আহবায়ক ছিলেন সদ্য খুন হওয়া তপন জ্যোতি চাকমা । ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সন্তু লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা যখন অস্ত্র সমর্পণ করছিলেন । ঠিক একই দিনে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে শত শত বিদ্রোহী পতাকা উত্তোলন করে অস্ত্র সমর্পণের প্রতিবাদ করেছিল । এর ই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গঠিত হয়। শুরু হয় সন্তু ও প্রসীতের নেতৃত্বে দুই সংগঠনের আধিপত্য রক্ষার লড়াই । একের পর এক খুন হত্যা চলতে থাকে পাহাড়ে রক্তাত হতে থাকে সবুজ পাহাড় । শান্তিচুক্তির পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৭৬ জন নিহত খুন হয়েছেন পাহাড়ে।
লেখক: কলামিষ্ট/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ