ইরান চুক্তির পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির
লিহান লিমা: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় ক্ষুদ্ধ ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ তাদের মিত্র দেশগুলো। ইতোমধ্যেই এই চুক্তির পক্ষে চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি।
স্পুটনিকের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিভঙ্গ প্রভাব ফেলেছে বার্লিন-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ওপর। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মেস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তার মিত্রদের অবস্থান কিংবা পরামর্শ গ্রহণের আগ্রহ খুবই কম। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিনের যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি সম্পর্কে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, বার্লিনের স্বার্থে জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কঠোর নীতি অনুসরণ করবে।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইরান চুক্তি প্রত্যাহার করে নেয়ার পর কোটি কোটি ডলারের ঝুঁকিতে পড়েছে ইউরোপিয় ইউনিয়ন। ২০১৬ সালে ইউরোপের অনেক ফার্ম ইরানের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। অনেক ফার্ম ভয় পাচ্ছে, যদি তারা ইরানের সঙ্গে চুক্তি অব্যাহত রাখে তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরানের সঙ্গে করা বিপুল পরিমাণ ব্যবসায়িক চুক্তি নিরাপদে রাখতে বিকল্প উপায় খুঁজছে ইইউ।
ইউরোপিয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফ্রেডেরিকা মোগেরিনি বলেন, শান্তি বজায় রাখতে ইইউ ইরান চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জানান, মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইরান, ব্রিটেন ফ্রান্স এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একত্রিত হবেন। ইতোমধ্যেই চীন, মস্কো এবং ব্রাসেলস সফরের উদ্দেশ্যে শনিবার ইরান ছেড়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
এদিকে আঞ্চলিক সহিংসতা এড়াতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মেরকেল। ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁরও এই মাসের শেষে রাশিয়া সফরের কথা রয়েছে। একই সময়ে ম্যাক্রোঁ ইরান চুক্তিতে ট্রাম্পকে বোঝাতে ওয়াশিংটন সফর করবেন। শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইরান চুক্তির প্রতি তার সরকারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকাতে ব্রিটেন ও তার ইউরোপিয় মিত্ররা সর্বোচ্চ চেষ্টা অক্ষুন্ন রাখবে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইরান চুক্তি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা- আইএইএ, জার্মানি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন পুতিন। ১৮ মে সোচিতে আইএইএর নির্বাহী প্রধান ইউকিয়া আমানো এবং এঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। আর ২৪-২৫ মে সেন্ট পিটাসবুর্গে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে পুতিনের। ক্রেমলিন জানায়, ইরান যে কোন রকম ক্ষতিকর পদক্ষেপ না নেয় এবং চুক্তির শর্ত অক্ষুণœ রাখে মস্কো তা নিশ্চিত করবে।
এদিকে ইরান চুক্তি ইস্যুতে পদত্যাগ করেছেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পরমাণু বিশেষজ্ঞ রিচার্ড জনসন। পদত্যাগের কোন কারণ উল্লেখ না করলেও সহকর্মীদের তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ইরান চুক্তি ছিল সফলতার অন্যতম উদাহরণ। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করা ঠেকাতে ওই অসাধারণ অর্জনের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। প্রসঙ্গত পদত্যাগের আগে ইরান চুক্তি অক্ষুণœ রাখতে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির কূটনৈতিক প্রচেষ্টার তিনি ছিলেন অন্যতম অংশীদার। ফার্স্টপোস্ট, ইন্ডিপেনডেন্ট, স্পুটনিক, বিবিসি।