কারাবন্দিদের সকালের খাবারের তালিকা পরিবর্তন হচ্ছে
সুজন কৈরী: কারাগারে আটক বন্দিদের সকালের খাবারের তালিকা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদপ্তর। এই প্রথমবারের মতো কয়েদি ও বিচারাধীন আসামিদের সকালের নাস্তা হিসেবে রুটি-গুড়ের পরিবর্তে সবজি-রুটি, রুটি হালুয়া বা খিচুড়ি খাওয়ানোর বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা অধিদপ্তর সুত্র জানায়, খাবারের মেনু পরিবর্তনে বন্দিদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ ও বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায়। এছাড়া বন্দির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও সকালের খাবারের পরিমান বাড়িয়ে বন্দিকে মানসিক ও শারিরিকভাবে সুস্থ রাখতেও এই খাবার সহায়তা করবে। বর্তমানে যে কোন বন্দিকে কারাগারে প্রবেশের পর সকাল বেলার খাবার হিসেবে দুটি শুকনা রুটি ও শুকনা গুড় দেয়া হয়। এছাড়া দুপুরে ও রাতে মাছ ভাত বা মাছ মাংস কিংবা সিডিউল অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হয়।
সুত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকালের নাস্তা পবির্তনে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তবে আর্থিক বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নেয়ার পর এই সদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাস থেকেই এই খাবার পরিবর্তন কার্যক্রম শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাসুত্র জানায়, নিন্মমানের শুকনো ও পরিমানে কম এসব খাবার অনেক বন্দিই খেতে চান না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রুচিমাফিক না হওয়ায় সকাল বেলায় না খেয়েও থাকতে দেখা যায়। এছাড়া আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বন্দিরা এরকম শুকনো খাবার খেতে কোনক্রমেই আগ্রহ প্রকাশ করেন না। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও ব্যয় নির্বাহে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ বিষয়ে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি। বর্তমানে দেশের প্রতিটি কারাগারের ভেতরে ও বাইরে প্রিজন্স ক্যান্টিন থাকায় ও প্রিজন্স ক্যাশ (পিসি) পদ্ধতি চালু থাকায় নিজস্ব ব্যয়ে অনেক বন্দিই তাদের নিজস্ব অর্থে সকালের খাবার ক্রয় করে খান। তবে অনেক বন্দিই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় তারা এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই রুটি গুড়ের নাস্তাই গলধ:করণ করেন। বর্তমানে প্রতিটি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে দৈনিক ১১৬ দশমিক ৬৪ গ্রাম আটা ও ১৪ দশমিক ৫৮ গ্রাম গুড় সকালের নাস্তা হিসেবে প্রদান করা হয়। এই পরিমান খাবার বন্দির সকালের নাস্তার তুলনায় অত্যন্ত কম। কারাসুত্র জানায়, তালিকা পরিবর্তন হলে সপ্তাহে তিনদিন সকালের নাস্তায় খিচুড়ি, বাকি তিনদিন রুটি ও সবজি এবং সপ্তাহে একদিন রুটি আর হালুয়া প্রদান করা হবে। এতে করে খাবারের মধ্যে স্বাদের পার্থক্য হবে বিধায় বন্দীদের মাঝে খাবার নিয়ে সন্তুষ্টি বাড়বে। এছাড়া সকালের খাবারের পরিমান বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, সকালের নাস্তায় খাবারের পরিমান বাড়াতে ও খাবারের প্রকার পরিবর্তন করা বন্দিদের দীর্ঘদিনের দাবী। বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা সকালের নাস্তায় রুটি ও মাত্র ১৪ গ্রাম গুড়ের পরিবর্তে রুটির সাথে সবজি ও হালুয়া বা খিচুড়ি খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে তা পরিবর্তন করা হবে। সকল কয়েদি ও বিচারাধীন হাজতি আসামিকেই এই খাবার পরিবেশন করা হবে। সম্পাদনা: আনিস রহমান