২৫ মে শেখ হাসিনা ও মোদি বৈঠক , তিস্তা নিয়ে আবারো আসবে প্রতিশ্রুতি ভারতের ৮শ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ ছাড় নিয়ে আলোচনা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ মে দুদিনের সরকারি সফরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন। বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভবন ও নিপ্পন ভবনের অনুকরণে তৈরি বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করতেই তিনি এই সফরে যাচ্ছেন। একই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দু’দেশের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ মে দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে। এবছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ও আগামী বছরের শুরুতে ভারতের নির্বাচনের আগে দুই দেশের মধ্যকার প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান।
তাছাড়া অমিমাংসিত তিস্তার বিষয়েও দুই সরকার প্রধান এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে। তবে যেহেতু এই সফরটি প্রধানমন্ত্রী টু প্রধানমন্ত্রী নয় তাই তিস্তায় কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। তিস্তার বিষয়ে জোরালো প্রতিশ্রুতি আসবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ অর্থ ছাড়ের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ইতোমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই দেশের মধ্যকার প্রকল্পগুলো শেষ করতে চান। এ বিষয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই সরকার প্রধান কথা বলতে চান।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশকে তিন দফায় ভারত মোট ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ২০১১ সালে দেওয়া হয় ১০০ কোটি ডলার। তার মধ্যে ২০ কোটি ডলার ছিল অনুদান। চার বছর পর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে ২০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এরপর শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ৫০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার নির্ধারিত সামরিক খাতের জন্য। বাকি ৪৫০ কোটি ডলার কোন কোন খাতে ব্যবহৃত হবে, সেই রূপরেখার কিছু কিছু তৈরি। এ পর্যন্ত মাত্র ৮০ কোটি ডলারের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। অর্থ এসেছে মাত্র ৩৮ কোটি ডলার। এসব প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে চান মোদি। তাছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বার বার অর্থছাড়ের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে ১৭ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়েছে গত ৪ অক্টোবর। ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর হয় কোনো দেশকে দেওয়া ভারতের এ যাবত কালের সর্বোচ্চ ঋণচুক্তিটি। ৪৫০ কোটি ডলারের এই ঋণে বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক, জাহাজ চলাচল, বন্দরসহ অবকাঠামো খাতে ১৭টি অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ।
অরুণ জেটলি বলেছিলেন, কোনো দেশকে ভারতের দেওয়া ঋণের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ ঋণ । এর আগে আরও দুটো লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ভারত মোট তিনশ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল, যার মাধ্যমে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ। এক শতাংশ হার সুদের এই চুক্তির মাধ্যমে সাত বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো বড় ধরনের ঋণ দিলো ভারত। এ নিয়ে গত ছয় বছরে বাংলাদেশকে ভারতের দেওয়া মোট এলওসি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় আট বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।
২৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ধমানের চুরুলিয়ায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থানে যাবেন এবং নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া ডিলিট উপাধি গ্রহণ করবেন। তিনি সেখানে বক্তৃতা করবেন। ২৫ মে বিশ্বভারতীতে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন বলে বিশ্বভারতীয় উপাচার্য সবুজকলি সেন গণমাধ্যমকে জানান।