১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব
ফয়সাল মেহেদী: আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। যা আলোচ্য অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট চেয়ে আড়াইগুণ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। অর্থনীতি সমিতির মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রস্তাবিত বাজেট যুক্তিসঙ্গত এবং যৌক্তিক। ২৬ মে, শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৮-১৯’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই বাজেট পেশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। এতে সূচনা বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ্, অধ্যাপক হান্নানা বেগম, মো. আবদুল হান্নান, কোষাধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান সরদার প্রমুখ। অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত এই বিকল্প বাজেট একযোগে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ময়মনসিংহেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
ড. আবুল বারকাত বলেন, অর্থমন্ত্রী সম্ভবত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন। আমরা তার চেয়ে আড়াইগুণ বেশি বাজেট প্রস্তাব করছি। আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় থেকে আসবে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ কোটি টাকা (যার ৭৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ এবং ২৩ শতাংশ পরোক্ষ কর)। অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের যোগান দেবে সরকারের রাজস্ব খাত। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমার মোট ২২টি নতুন উৎস নির্দেশ করেছি, যা অতীতে ছিল না।
সমিতির সভাপতি বলেন, বাকি ২ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বা ১৯ শতাংশ ঘাটতি অর্থায়ন মেটাবে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ অংশিদারিত্ব। বাজেটের ঘাটতি পূরণে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না বলেও জানান আবুল বারকাত।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে সব চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষাখাতের জন্য। এ খাতের জন্য আমরা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা চলমান বাজেটের তুলনায় ৪গুণ বেশি। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য ২ লাখ ৫২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাতের জন্য ৮৪ হাজার ৯৫০ কোটি, পরিবহন খাতের জন্য ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতের জন্য ৭২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন খাতের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৮ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধে ৬০০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করছি।
অর্থনীতি সমিতির নেতারা বলেন, দেশ থেকে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। আর দেশে পুঞ্জিভূত কালোটাকার পরিমাণ ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। এই অর্থ নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ ঋণখেলাপীদের ১০০ জনের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করেছে অর্থনীতি সমিতি। দেশে বেকারের সংখ্যা কমপক্ষে ১ কোটি ৭৫ লাখ দাবি করে তারা বলেন বাজেট হতে হবে কর্মসংস্থানমুখী।