‘রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে আরাকানে ব্যবসা করতে চাচ্ছে চীন-রাশিয়া-ভারত’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে চীন-রাশিয়া ও ভারতের স্বার্থ জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। গতকাল লন্ডন শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশি ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর ‘প্লিজ হেলপ ফর রোহিঙ্গা’স্লোগানে হু আর দ্যা নিউ ‘ভোট পিপল?’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী পূর্বক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তেব্যে আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, আসলেই এই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এখন আর মানুষ হার্ট হয় না! কারণ সেই ১৯৭৮ সাল থেকে একের পর এক রোহিঙ্গাদের ওপর চলে আসছে বর্বর নির্যাতন। মানুষ এটা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ফোজিত শেখ বাবু তার ছবির মাধ্যমে এমন কিছু তুলে ধরে চেষ্টা করেছেন যা আসলেই মানুষকে হার্ট করবে। এই রোহিঙ্গা সমস্যা বিশে^র মোড়ল দেশগুলো রাশিয়া, চীন ও ভারত চাইলেই সমাধান করতে পারে। কিন্তু কেনো করছে না জানেন? মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে সেখানে (আরাকান রাজ্যে) ব্যবসা করতে চাচ্ছে তারা। এটার সাথে তাদের স্বার্থ জড়িত রয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির নাম বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হলেই সমস্যার সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। মানবতার তাগিদে বার বার বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে এদের দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশের মত দেশের জন্য অসম্ভব
বললেই চলে। তাই আমার আহ্বান থাকবে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো এগিয়ে আসুক রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধাণে। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।
প্রধান আলোচক তাসলিম শাকুর বলেন, আসলেই রোহিঙ্গারা এমন এক জাতি যাদের কোনো অভিভাবক নেই! যাদের অভিভাবক নেই তাদের কোনো ঠাঁইও নেই। তা না হলে আপনারা দেখুন বার বার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়রে ওপর নির্যাতন হলেও এই সমস্যা সমাধাণে কেউই শক্তভাবে এগিয়ে আসছে না। যখনই রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হচ্ছে তখন জাতিসংঘ, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশগুলো বিবৃতি এবং প্রতিবাদের মাধ্যমে তাদের দায় সারছে। কিন্তু এটির স্থায়ী সমাধাণের কথা মুখে বললেও কাজের বেলায় কেউ নেই। এই জাতিগোষ্ঠীকে বাঁচাতে এখনই বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসতে হবে। জেতাতে হবে মানবতাকে। দমন করতে হবে মিয়ানমারকে।
ডা. রহমান জিলানীর সভাপতিত্বে ও ডা. শম্পা দেওয়ান পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়জুল ইসলামসহ স্থানীয় ব্রিটেনের নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
আলোচনা সভা শেষে ৪দিনব্যাপী প্রদর্শনীর ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন আবদুল গাফফার চৌধুরীসহ অতিথিরা। প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত। পরে তারা প্রদর্শনীর ঘুরে দেখেন। পরিশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যায় ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মূল উদ্দ্যেশ্য মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে বর্বরোচিত নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যা ও উচ্ছেদ অভিযানে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা। একই দাবিতে যুক্তরাজ্যের এজ হিল ইউনিভার্সিটিতেও চলছে ফোজিত শেখ বাবুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যেটা চলবে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত।