ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থা নিয়ে সংসদে তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান সম্রাট: সংসদে ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার জন্য গতকাল তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংসদ সদস্যরা টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। গতকাল রোববার চলতি অর্থবছরের সম্পুরক বাজেটের ওপর আলোচনা অংশ নিয়ে তারা এই দাবি জানান।
দুই দিন বিরতির পর গতকাল বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ২০১৭-১৮ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ।
অধ্যাপক আলী আশরাফ তার বক্তব্যে বলেন, ব্যাংকে জনগনের জমানো টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে জনগণের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থা নিয়ে সংসদে তোপের মুখে অর্থমন্ত্রীজাতীয় পার্টির কাজী ফিে
রাজ রশীদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বিশাল বাজেট দিয়ে ভীষণ খুশি। কিন্ত বাস্তবতা ঠিক উল্টো। অগ্রগতি খুবই নগণ্য। কারণ সর্বক্ষেত্রে লুটপাট চলছে। সুশাসনের অভাব রয়েছে। ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। এক ঘন্টার বৃষ্টিতে ঢাকা শহর ডুবে যাচ্ছে। অর্থ বছর শেষে খোঁড়াখুঁড়ি চলে। মানুষের দূর্ভোগের সীমা নেই। রাজধানীতে বাস ও নৌকা চলে। তিনি আরো বলেন, পূঁজিবাজারে চরম অব্যবস্থাপনা চলছে। এই খাত থেকে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এমপিওভূক্তির জন্য শিক্ষকরা রাস্তায় নামছে। ছাত্ররা রাস্তায় রয়েছে। তাদের দাবি না মেনে ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এই বাজেট ভোটের নয়, ভোট নষ্ট করার বাজেট বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বাড়ানো সত্ত্বেও ঘুষ চলছে। ঘুষ ছাড়া ভূমি জরিপ হয় না। বিদ্যুতের লাইনের জন্য ঘুষ দিতে হয়। এমনকি হাসপাতালসহ সেবা খাতেও ঘুষ চলছে।
সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির বিষয়টি দ্রুত বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এক প্রকার না খেয়ে আছে। শিক্ষার উন্নয়নের স্বার্থে এবিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
নূরুল ইসলাম ওমর বলেন, প্রত্যেকটি ভালো কাজের সঙ্গে একটি খারাপ বিষয় যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণে তেমনটি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো নিয়ম মানছে না। অনেকেই বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারেন না। কিন্তু টাকা ধরে রাখেন। খরচ না করতে পারলে টাকা ফেরত দিন। তিনি বলেন, ব্যাপক পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যাদের কোন কাজ নেই। আবার আমার বগুড়া জেলা পরিষদে দীর্ঘ দিন ধরে সচিব নেই। তাহলে এই প্রতিষ্ঠানটি চলবে কিভাবে? যে সকল মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হচ্ছে তাদের সম্পুরক বাজেট অনুমোদন না দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পীর ফজলুর রহমান বলেন, বড় বাজেট নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। কারণ গড় মাথাপিছু আয় ৭ শ’ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ৭শ ডলার হলেও সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষের আয় কত? আয় কমেছে। মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকারি তদন্তে ব্যাংক লুটপাটকারীদের নাম উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বেসরকারি স্কুল-কলেজ এমপিওভূক্তিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানান সরকারী দলের সদস্য সোহরাব উদ্দিন। তিনি ব্যাংকখাতের লুটপাটকারীদের শাস্তির পাশাপাশি মানি লন্ডারিং বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া আহ্বান জানান।