রাষ্ট্রায়ত্ত ১৬টি সংস্থার বকেয়া ব্যাংক ঋণ ৩১,১৪৭ কোটি টাকা
সোহেল রহমান: রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বকেয়া ব্যাংক ঋণ ও খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বকেয়া ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৬টি সংস্থার বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল ১৬৩ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বকেয়া ব্যাংক ঋণের শীর্ষে রয়েছে ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। গত জানুয়ারি শেষে বিপিডিবি’র মোট দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। তবে আগের বছরের তুলনায় সংস্থাটির ঋণের পরিমাণ কমেছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বিপিডিবি’র মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৪৭৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলোরও শীর্ষে রয়েছে বিপিডিবি। যদিও প্রতিষ্ঠানটির লোকসান চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা কমেছে। বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি টানা লোকসান দিয়ে আসছে। বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিপিডিবি’র লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ২৪৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
দেনার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন’ (বিএসএফআইসি)। এর বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের বছরের তুলনায় সংস্থাটির ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বিএসএফআইসি’র মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও বিএসএফআইসি অন্যতম। বিদায়ী অর্থবছরে সংস্থাটির মোট লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪০৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
টানা চার বছর ধরে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’ (বিপিসি) মুনাফা করলেও সংস্থাটির বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ১৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এমন কী গত বছরের তুলনায়ও বিপিসি’র দেনার পরিমাণ ৮৫৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে বিপিসি’র বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ সংস্থাটির মুনাফার চেয়েও বেশি। চলতি অর্থবছরে বিপিসি’র মুনাফা ৩ হাজার ৯৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
দেনার তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ‘বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প কর্পোরেশন’ (বিসিআইসি)। এ সংস্থাটির বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এটা গত বছরের তুলনায় ৯১৫ কোটি টাকা বেশি। এটিও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানী প্রতিষ্ঠান। চলতি অর্থবছরে বিসিআইসি’র লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
দেনার তালিকায় পঞ্চম প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন’ (বিএডিসি)। এ সংস্থাটির বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এটা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৪৮ লাখ টাকা বেশি।
অন্যান্যের মধ্যে ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড’ (আরইবি)-এর বকেয়া ব্যাংক ঋণ ১ হাজার ২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, বিবিসি’র বকেয়া ব্যাংক ঋণ ৯৪৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’ (বিজেএমসি)-এর বকেয়া ব্যাংক ঋণ ৭৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, বিওজিএমসি’র বকেয়া ব্যাংক ঋণ ৬৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ (বিডব্লিডিবি)-এর বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৬২৩ কোটি টাকা, ঢাকা ওয়াসা’র ৪৬০ কোটি টাকা ও সিপিএ’র ৪৫১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বকেয়া ব্যাংক ঋণ রয়েছে।
এছাড়া বিটিবি’র ৪৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, টিসিবি’র ৩৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, বিটিএমসি’র ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও বিআরটিসি’র ৫৭ লাখ টাকা বকেয়া ব্যাংক ঋণ রয়েছে।