শরণার্থীদের মর্যাদা ও অধিকারের দাবিতে সুশীল সমাজের মানববন্ধন
দেবব্রত দত্ত: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য সরকারসমূহকে কাজ করতে হবে। দশ লক্ষ শরণার্থীদের নিজ গৃহ ছেড়ে অন্য দেশের সীমানা অতিক্রম করার পেছনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার জন্য মিয়ানমার সামরিক জান্তাকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে বলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দাবী করেন ।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কোস্ট ট্রাস্ট ও কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন দাবী করেন।
মানববন্ধনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী এএইচএম বজলুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক নিরাপত্তা জোটের খন্দকার আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের এএসএম বদরুল আলম, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন (জাই)-এর জায়েদ ইকবাল খান, কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক বরকত উল্লাহ মারুফ ও ইকবাল হোসেন। সমাবেশে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ।
এএইচএম বজলুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘ স্বীকৃত শরণার্থীদের অধিকারসমূহের মধ্যে তাদের কাজ করার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশে আগত প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানে বিশাল এক কর্মশক্তি যা অলসভাবে বসে আছে। কাজ করলে তারা অনেক কিছু উৎপাদন করতে পারত। আবার কাজ না করার কারণে তাদের নানা ধরণের অনাকাঙ্খিত কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কতটা অমানবিক জীবন যাপন করছে তা অনুধাবন করতে না পারলে তাদের জন্য দাবি তোলা সহজ নয়।
খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, কক্সবাজারে ২লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবার রয়েছে এবং একটি জরিপে দেখা যায় প্রতি বছর প্রায় ৮০হাজার নতুন শিশু এখানে জন্ম নেবে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর দায়ভার কে নেবে? এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ সরকার যেমন দায়ী নয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও দায়ী নয়। এর জন্য এককভাবে দায়ী মিয়ানমারের সামরিকজান্তা, যাকে অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে পৃথিবীতে প্রায় ৭কোটি শরণার্থী রয়েছে। বিশ্বের সরকারসমূহ তাদের জন্য কী করছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শরনার্থী এজেন্সি একটি পিটিশন দিয়েছে যেখানে বিশ্বের সকল সরকারকে আহ্বান করা হয়েছে তারা যেন অবশ্যই শরণার্থীদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে।
বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, শরণার্থীরা সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে তাদের শরণার্থীদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করার জন্য সংঘটিত যুদ্ধ ও ঘৃণা। বিশ্বের দেশে দেশে সংঘটিত এই যুদ্ধ ও জাতিগত ঘৃণা তাই মানবতা বিরোধী অপরাধ যা নারী ও শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করতে হবে যাতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অবিলম্বে মর্যাদার সাথে ও তাদের সকল অধিকার নিয়ে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে পারে।
ইকবাল হোসেন বলেন, শরণার্থীদের মর্যাদা ও অধিকারের জন্য কোস্ট ট্রাস্ট ও সিসিএনএফ (কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম) প্রথম থেকেই ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে । বিশাল রোহিঙ্গা শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়, খাদ্য ও জরুরি চিকিৎসা প্রদানের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তবে, এখন এই শরণার্থীদের দ্রুত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে।