পৌলী নদীতে ভাঙন, হুমকির মুখে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ
অলক কুমার দাস, টাঙ্গাইল: বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইলের পৌলী নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর উত্তর তীরে ৬০০ মিটার ও দক্ষিণ তীরে ৮০০ মিটার এলাকা এবং ৮-১০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। দক্ষিণ তীরের ভাঙন টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে। স্থানীয়রা জানায়, বেশ কিছুদিন যাবৎ পৌলী নদীতে বর্ষার পানি এসেছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে নদীর দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পৌলী নদীর বাম তীরে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা ও সহদেবপুর ইউনিয়ন এবং ডান তীরে সদর উপজেলার গালা ও ঘারিন্দা ইউনিয়নের আওতায়। নদীর বাম তীরে (উত্তরাংশে) অর্থাৎ এলেঙ্গা পৌরসভার অংশে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে এলেঙ্গা পৌরসভার ফটিকজানী ও মহেলা গ্রামের ৬০০ মিটার এলাকার আবাদি জমি এবং মহেলা গ্রামের সেকান্দর আলী ও তার ভাইদের ৮-১০টি বাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। নদীর ভাঙন চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। বাঁধটি রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাঁধের পাশেই মহেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহেলা মাদ্রাসা, মহেলা ঈদ গাঁ মাঠ ও গোরস্থান। চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধটি ভেঙে গেলে কালিহাতী উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা প্লাবিত হয়ে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে। পৌলী নদীর ডান তীরে রেল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকাটিও এলেঙ্গা পৌরসভার মহেলা আদর্শ গ্রাম (গুচ্ছ গ্রাম) এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের পাছবেথইর, আগবেথইর ও শালিনা গ্রামের অংশেও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০০মিটার এলাকা ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে বর্তমানে কম্পার্টমেন্টালাইজেশন পাইলট প্রকল্পের বাঁধ (টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ) ছুঁই ছুঁই করছে। এ বাঁধটি ভাঙনের শিকার হলে টাঙ্গাইল শহর, গালা, ঘারিন্দা, করটিয়া ইউনিয়ন সহ বাসাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর-ফসলি জমি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার ফটিকজানী মো. জয়নাল আবেদীন, বেলায়েত হোসেন, মহেলা গ্রামের মামুনুর রশিদ, আলতাফ মিয়া সহ অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুমে নদীর তলদেশে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করায় এখন নদী তীরের নিচে ধসে ভেঙে পড়ছে। নদীতে পানি আসার সময়ই পরিস্থিতি বিবেচনায় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও কোন কার্যকারিতা দেখা যায়নি। ফলে নদী তীর ভাঙতে ভাঙতে আবাদি জমি গিলে চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধ কাম রাস্তার কাছাকাছি এসে পোঁছেছে। বাঁধটি ভাঙনের শিকার হলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হবে।এলেঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর শুকুমার ঘোষ ও আব্দুল বারেক জানান, পৌলী নদীতে প্রতিবছর বর্ষায়ই দুই তীরে ভাঙন দেখা দেয়। এ বিষয়ে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানালেও তারা কোন ব্যবস্থাই নেননি। এ বছর বর্ষার শুরুতেই নদীর বাম তীরে ফটিকজানী গ্রামের অংশে প্রস্থে ন্যূনতম ৭০ ফুট ও মহেলা গ্রামের অংশে ন্যূনতম ১৪০ ফুট প্রস্থে বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ জানান, তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। প্রকল্প অনুমোদিত হলে ভাঙন রোধে কাজ করা হবে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে তাদের কাছে কোনো বাজেট নেই।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, তিনি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছেন। পৌলী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে দুই স্তরে ব্যবস্থা নেয়া হবে- বর্তমানে জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও শুকনো মৌসুমে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। নদী ভাঙনে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেলে টাঙ্গাইল শহর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা মারাত্মক দুর্যোগের সম্মুখীন হবে। তিনি জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রীর পিএসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।