বাণিজ্য শুল্কের উত্তেজনায় বিশ্ব পুঁজিবাজার নি¤œগামি
নূর মাজিদ: টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো নিম্নগামী প্রবণতায় পড়েছে বিশ্ব পুঁজিবাজার। তবে শুক্রবার কিছুটা উন্নতির ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা গেলেও বাণিজ্য শুল্ক এবং ওপেকের বৈঠকের পূর্বে জ্বালানি তেলের উচ্চমুল্য শেয়ারবাজারের নিম্নগামী প্রবণতা অব্যাহত রাখে। এমএসসিআই সূচকের বিশ্বের সকল প্রধান প্রধান শেয়ারবাজারের সামস্টিক সূচকে দেখা যায়, এই সপ্তাহের লেনদেনের শুরুতে ইউরোপের বাজারগুলোর সূচক ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও তা সপ্তাহান্তে মাইনাস ১.৩ শতাংশ নিম্নগামী প্রবণতায় পতিত হয়েছে। ফলে মার্চের পর থেকে সবচাইতে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে ইউরোপীয় পুঁজিবাজার।
এশিয়া এবং মার্কিন পুজিবাজারগুলোতেও একই নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার জাপানের মিয়াপজ০০০ইউএস ইনডেক্স সূচক ০.৩৫ শতাংশ কমে যায় যা গত ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন। এছাড়াও হংকং এর হ্যাংসেং এইএসআই সূচক ৩.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ছয়মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। এমনকি এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি কেএস১১ এবং জাপানের নিক্কি এন২২৫ এই সপ্তাহে ১.৭ শতাংশ নিম্নগামী হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এখন শঙ্কায় ভুগছেন যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্কারোপ বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির গতি থামিয়ে দেবে। এমনকি নতুন করে বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়না।
এমনকি এই শঙ্কাকে আক্ষরিক বাস্তবতা রুপেই দেখা শুরু করে করেছেন অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। জার্মান গাড়ি নির্মাতা ডেইমলার এই সপ্তাহের শুরুতে আরনিং ফোরকাস্টে জানায়, এই শুল্কের ফলে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত তাদের গাড়িগুলোকে চীনের রপ্তানি বাজারে বাড়তি বিপত্তির মুখে পড়তে হবে।
তবে পাল্টা ব্যবস্থা শুধু চীন নিয়েছে তা নয়। এই সপ্তাহেই ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ষ্টীল ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি শুল্কের বিপরীতে পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডাও জি-৭ সম্মেলন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপকে অপমান বলে এর উপযুক্ত জবাব দেবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
যদিও মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস বৃহস্পতিবার বলেন, “বাণিজ্য অংশীদারদের জন্য কঠিন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আসলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ব বানিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভারসাম্য আনতে চাইছেন। এবং ধীরে ধীরে শুল্কের মাত্রা ও আওতা কমিয়ে আনা হব।” তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভাষ্যে আশ্বস্ত হচ্ছে না চীন। দেশটির সরকারি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে শুক্রবার বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদি আচরণ তার নিজের পরাজয় ডেকে আনবে এবং যুক্তরাষ্ট্র উম্মাদের মতো দিবাস্বপ্নে বিভোর রয়েছে।”
কোপেনহেগেনের ডান্সকে ব্যাংক তার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের জন্য প্রকাশিত এক বিনিয়োগ বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে জানায়, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আশু আলোচনার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা, বরং আমাদের ধারণা আগামী দিনে এই সংঘাত আরো তীব্র হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিগত ১৮ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কায় সবচাইতে কমে গেছে। রয়টার্স