বিজেপির প্রতি ক্রুদ্ধ তো নয়ই, পিডিপির বিপর্যয়ে খুশি কাশ্মীরিরা
সাউথ এশিয়ান মনিটর: কাশ্মীরে পিডিপির প্রতি দেওয়া সমর্থন বিজেপি প্রত্যাহার করবে- এমন কথা গুজব আকারে শুরু হয়েছিল। তেমন কেউ এতে কান দেয়নি। পিডিপির প্রতি সমর্থন বিজেপি প্রত্যাহার করবে- এমনটা বলতে গেলে কেউ ভাবতেই পারেনি। কারণ এই জোটে থাকার কারণেই বিজেপি ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন দল হতে পেরেছিল, যা ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিল সুদূরের কল্পনা। কিন্তু গুজবটি সত্য হয়েছে, অবশ্য তাতে সময় লেগেছে। তারপর লোকজন কথা বলতে শুরু করল। তারপর দ্রুত সামাজিক মিডিয়া পোস্ট আর মাইমে ছেয়ে গেল।
বিজেপির সমর্থন প্রত্যাহারে ক্রোধের তো সৃষ্টি হয়ইনি, বরং তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বলে অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একটি দৈনিকে পরিচালিত জনমতে দেখা যায়, ৯২ ভাগ লোক সরকারের পতনকে সমর্থন করেছে।
টুইটারে বিখ্যাত কাশ্মিরি কার্টুনিস্ট সোহাইল নকশবন্দি বলেন, বিজেপি-পিডিপি শাসন একটি কারণে মনে থাকবে। তা হলো রক্তপাত। মেহবুবা মুফতি সরকারকে এমন অপদস্থকরভাবে ছুঁড়ে ফেলা হলো যে কাশ্মিরিদের মধ্যে এই পতনে আনন্দের সৃষ্টি হলো। প্রখ্যাত অ্যাক্টিভিস্ট শেহলা রশিদ বলেন, এই প্রত্যাহার আসলে জোট অংশীদারদের কোনো ধরনের জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা করার নাটক। তিনি বলেন, তারা স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক/অর্থনৈতিক ব্যর্থতা থেকে পালাচ্ছে। জোট ভেঙে যাওয়ার পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা সামাজিক মাধ্যমজুড়ে ছিল কেবল পিডিপির সমালোচনা, বিশেষ করে দলটির নেতা মেহবুবা মুফতির। বিজেপির সাথে জোট গড়া ছিল মেহবুবার জন্য একটি বড় ধরনের পতন। এই জোট গড়ার আগে তিনি কাশ্মিরের মূলধারার রাজনীতিতে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে দাবি করতে পারতেন। তার প্রতি মানুষের যে আস্থা ছিল, বিজেপির সাথে জোট গড়ে তিনি তা নস্যাত করার কারণেই এমন ক্রোধ দেখা গেছে। ২০১৬ সালে হত্যাকা- ও অন্ধকরণে তার জনপ্রিয়তা শেষ হয়ে যায়। ফলে বিজেপির সমর্থন প্রত্যাহার তার জন্য শোচনীয় পরিস্থিতি বলে প্রচার পায়।
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ পর্যন্ত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে একই ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। নাগরিক সমাজের সদস্যরা অবশ্য এই জোট ভেঙে যাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন।
জম্মুভিত্তিক শিক্ষাবিদ রেখা চৌধুরী বলেন, এই ধরনের জোট ভেঙে যেতে বাধ্য। এই জোটের শরিকেরা একে অপরের সাথে শুরু থেকেই মিশতে পারেনি। দুই দল পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মতাদর্শের অনুসারী হওয়ায় বিপরীত দিকেই একে অপরকে ঠেলছিল। ক্ষমতায় থাকার অভিন্ন লক্ষ্য ছাড়া তাদের মধ্যে আর কোনো মিল ছিল না। তিনি বলেন, জোটের এজেন্ডায় ছিল তারা রাজ্যের স্বার্থে কাজ করার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে আন্তঃআঞ্চলিক সঙ্ঘাত নিরসনেও চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, ওই এজেন্ডা কাগজেই রয়ে গিয়েছিল। জোটের শরিকরা নিজেদের মতাদর্শের প্রতি আরো বেশি আগ্রাসী হওয়ায় তাদেরকে নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে আপস করতে হয়েছিল। ফলে প্রকাশ্যে তাদের মধ্যে সমন্বয়ধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির বদলে সঙ্ঘাতময় অবস্থানে দেখা গিয়েছিল।
এখন মেহবুবা মুফতি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। কংগ্রেস বা অন্য কোনো দলও পিডিপির প্রতি সমর্থন দিচ্ছে না। আর বিজেপি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক’ যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে আরো মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটতে পারে। মেহবুবা যদি এখন জনবান্ধব আহ্বানও জানাতে থাকেন, তবুও তার অবস্থা ভালো হবে না, বরং আরো অবনতি ঘটবে।