সিটি কর্পোরেশনের শতকোটি টাকা রাজস্ব হারানোর শঙ্কা রাজধানীতে ২১টি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট ইজারার প্রস্তুতি
শাকিল আহমেদ: রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোট ২১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজধানীর সম্ভাব্য অস্থায়ী হাটগুলো ইজারা দেয়ার জন্য যাচাই বাচাই কার্যক্রম শেষ করেছে। ডিএসসিসি এলাকায় ১৩টি এবং ডিএনসিসি এলাকায় ৮টি বসবে। কর্পোরেশনের সূত্রে জানা গেছে দু’এক দিনের মধ্যে এসব হাটের দরপত্র আহ্বান করা হবে। অনুন্ধানে দেখা গেছে, গতবছর সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীনদের সিন্ডিকেটের কারণে রাজধানী ঢাকার অস্থায়ী ২৪টি কোরবানি পশুর হাট থেকে শত কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন। হাটগুলো থেকে কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকা হাসিল উত্তোলন করেছে ইজারাদাররা। অথচ হাটগুলোর ইজারা থেকে ডিসিসি পেয়েছে মাত্র ২৩ কোটি টাকা। সিটি কর্পোরেশন চাইলে হাটগুলো থেকে আরো অন্তত ৬ থেকে ৭ গুণ রাজস্ব আয় করতে পারত।
গত বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯টি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্ষম হন। এছাড়া ৭টি হাট খাস আদায়ের জন্য দিলেও একটি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে মোট ১৫টি হাট ইজারা দিয়েছিল ডিএসসিসি।
আর উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে ৮টি হাটের ইজারা দেয়া হয়েছিল। এসব হাটের ইজারামূল্য ছিল প্রায় ২৩ কোটি টাকা। ইজারাদারদের তথ্যমতে, অস্থায়ী হাটে চার লাখ ৫০ হাজার গরু বিক্রি হয়। ৪৬ হাজার ছাগল বিক্রি হয়। এ সময় শতকরা ৫ টাকা হারে ১৩৮ কোটি টাকা হাসিল আদায় হয়েছে।
গত বছরের বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গরুর গড় দাম ছিল ৬০ হাজার টাকা এবং ছাগলের গড় দাম ছিল ১০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটে এ তথ্য সরবরাহ করে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
একই চিত্র ছিল ২০১৬ সালের অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটগুলোরও। ওই বছর ঢাকা শহরের ২২টি পশুর হাটে দুই লাখ ৪৩ হাজার গরু বিক্রি হয়। আর ৩৫ হাজার ৪২০টি ছাগল বিক্রি হয়। এ হাটগুলোর মোট ইজারামূল্য ছিল ১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অথচ এসব হাটে ৭৪ কোটি টাকা হাসিল আদায় হয়। ২০১৬ সালে ইজারামূল্যের চেয়ে ৫৬ কোটি টাকার বেশি হাসিল আদায় হয়। এসব তথ্য ইজারাদারদের দেয়া। তবে হাসিল আদায় আরও বেশি ছিল। সিটি কর্পোরেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ইজারাদাররা রাজস্ব আয় কম দেখানোর জন্য নিজেদের মতো করে তথ্য সরবরাহ করেন।
তথ্যানুসন্ধানে অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটের ইজারামূল্য ও হাসিল আদায়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। দরপত্র প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ার পেছনে এটি অন্যতম কারণ। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাব এবং টেন্ডার সমঝোতার কারণে আবেদন কম পড়ে। পাতানো দরপত্রের কারণে সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণে থাকে অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটগুলো।
২০১৬ সালে ঝিগাতলা হাজারীবাগ অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ইজারামূল্য ছিল ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। অথচ সে বছর ওই হাটে ১০ হাজার ৩২০টি গরু বিক্রি হয় এবং চার হাজার ১২০টি ছাগল বিক্রি হয়। শতকরা ৫ টাকা হাসিল হিসাবে ইজারাদার গরু বিক্রি থেকে ৩ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ছাগল বিক্রি থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাসিল আদায় করেন। এসব জানার পরও গত বছর ঝিগাতলা হাটের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এবারও একই পথে চলছে হাট ইজারার প্রক্রিয়া।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোরবানির পশুর হাট ইজারা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি। যথাযথ নিয়মের মধ্যে থেকেই হাটগুলোর ইজারা কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে এসব হাট থেকে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো প্রস্তুতি নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ইজারা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত ফাইল মেয়রের দফতরে রয়েছে। ফাইল হাতে পেলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান নীতিমালার কারণে সিটি কর্পোরেশন চাইলে কোনো হাটের ইজারামূল্য বাড়াতে পারে না। ডিএনসিসি এলাকার হাটে ইজারামূল্যের চেয়ে বেশি হাসিল আদায় হলেও তা সহনীয়।