এসডিজি বাস্তবায়নে বাজেটের আকার বাড়াতে হবে: সিপিডি
ফয়সাল মেহেদী: এসডিজি বাস্তবায়নে বাজেটের আকার বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বাজেট কাঠামোর পরিবর্তন আনতে হবে। গতকাল রোববার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সিপিডি বাজেট সংলাপ-২০১৮’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। তারা বলেন, জিডিপি গ্রোথের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ছে না। এটার সমন্বয় না করতে পারলে ডায়াবেটিকস রোগীর মতো অর্থনীতি ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে ফেলবে।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বিশেষ অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরসহ রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা অংশ নেন। সংলাপের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন এবং সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমল থেকে খেলাপি ঋণের শুরু মন্তব্য করে সিপিডি চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, বর্তমানে সেটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর্থিক খাতের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এটা না করতে পারলে দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদজনক হবে। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ব্যাংকিং খাত অর্থনীতির জন্য বিষফোড়া হয়ে গেছে। এ একদিকে দুর্নীতি, অনিয়ম। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের দৌরাত্ম অর্থনীতির সকল অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি সরকারগুলোর ধারাবাহিক ফল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সিপিডির সম্মানিত ফেলো রওনক জাহান বলেন, সরকারের নয় বছরে সাধারণ মানুষের বৈষম্য বেড়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, দরিদ্র শ্রেণির বন্ধনি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে পৃথিবীর অর্থনীতিতে আমাদের অবস্থান ছিল ৫৮তম দেশ। এই ১০ বছরে আমরা ১৬টি দেশকে ডিঙ্গিয়েছি- আমাদের অবস্থান এখন ৪২তম স্থানে। তিনি আরও বলেন, আমরা যদি ১০ বছরে ১৬টি দেশকে টপকাতে পারি, তাহলে ২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশ হওয়ার যে স্বপ্ন আছে, তা পূরণ করতে পারবো। প্রতি বছর একটি করে দেশকে পিছনে ফেলে ২২ বছরে ২২টি দেশকে টপকে যাবে বাংলাদেশ। তখন বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২০তম। আমরা জি-২০ বা এলিট ক্লাসে পৌঁছে যাবো। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যাংক খাতে অনিয়মকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করা হবে। যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করবে সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের বাজেট হইছে খিচুড়ি। হাজার হাজার অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা হয়, প্রস্তাব আসে। হয়তো আপনি যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা হুবুহু পাবেন না। কিন্তু বাজেটের অভ্যন্তরে লক্ষ্য করলেই আপনার এর সত্যতা পাবেন। এখানে সবার মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ ও ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেটের আকার বাড়াতে হবে। তেমনি এর যোগানের লক্ষ্যে রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার জরুরি। না হলে আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারবো না। এনজিও প্রতিনিধি খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলে, বাজেটে প্রতিবারই ৫-২৫% বাড়ছে। ১৯৫৮ সালের কাঠামোতে এখন পর্যন্ত কোন পরিবর্তন আসেনি। তাই আকার বাড়ানোর সঙ্গে কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। এমসিসিআই প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাত কবির বলেন, দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। সরকারি অফিসে সময় বেশি লাগছে, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কথা বলা হলেও তা দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে কর আদায় সহজীকরণ, প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের ৫ শতাংশ মানুষ সম্পদ লুট করেছে। মেঘা প্রকল্প, শেয়ার বাজার-ব্যাংক লুট নামে টাকা হাতিয়ে তারা বিদেশে পাচার করেছে। কানাডা, লন্ডন আর মালয়েশিয়ার এ সব মানুষের ঠিকানা। এনবিআর এসব লোককে ধরার ব্যবস্থা করলে রাজস্ব বাড়বে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, কর কাঠামোতে নতুন বিন্যাস না হলে মধ্যবিত্তের চাপ বাড়বে। ব্যাংক খাতে কর্পোরেট কর কমানোর সুফল নিশ্চিত করা সম্ভ হবে না। ব্যক্তি কর আয়সীমা পরিবর্তন দরকার।