রপ্তানি আয় হয়েছে সাড়ে ৩৬শ কোটি ডলার
স্বপ্না চক্রবর্তী : ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয় বাড়লেও অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। সদ্য বিদায়ী এই অর্থবছরে মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ ৬৬ কোটি ৮১ লাখ মার্কিন ডলার। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে পোশাক খাতের উপর ভর করে অর্জিত এ আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি।
গতকাল বুধবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই বছর মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রকাশিত প্রতিবেদনে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ হাজার ৭শ’ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ২ দশমিক ২২ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, পোশাক খাত ছাড়া বেশির ভাগ পণ্যেরই রপ্তানি আয় নেতিবাচক। শুধু তাই নয় অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও কমেছে এই আয়। প্রতিবেদনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ছিল মোট তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার। প্রকাশিত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয় ৩ হাজার ৬শ’ ৬৬কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আয়ের তুলনায় ২০ কোটি ১২ লাখ ডলার বেশি।
তবে সামষ্টিকভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শুধু জুনে মাসেই রফতানি আয় কমে যায়। এ মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ও প্রবৃদ্ধি উভয়ই কমেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায় একক মাস হিসাবে শুধু জুনেই রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ৩৬২ কোটি ৩০ লাখ ডলার যেখানে রফতানি আয় হয়েছে ২৯৩কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলার যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ কম অর্জিত হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬১কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল দুই হাজার ৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। এ হিসাবে আয় বেশি হয়েছে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে প্রবৃদ্ধির হারও। অর্থবছরের জুলাই-জুন মেয়াদে পোশাক খাতে আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ১ হাজার ১১৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার আয় হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে নিট প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৪২ কোটি ৬২ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।
পোশাক খাতে রফতানি আয় বাড়ার বিষয়টিকে পোশাক খাতের জন্য নতুন দিগন্তের শুরু হিসেবে দেখছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, পোশাক শিল্প স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও সাফল্য অর্জনে সক্ষম হচ্ছে। বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক সংবাদ। তবে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদের চাইতে অনেক এগিয়ে আছে। তাদের সাথে প্রতিযোগীতায় সফল হওয়ার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাাচ্ছি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যান্য পণ্যের মধ্যে গত অর্থবছর হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ সময় আয় এসেছে ৮৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। পাট ও পাটজাত পণ্যে রপ্তানিতে গত বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কম হয়েছে ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের চেয়ে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ কম হয়েছে। আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৯কোটি ৮৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, কৃষিপণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।