রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে এডিবি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিয়াতন ও নিধনযজ্ঞ থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গার জন্য স্থাপনা উন্নয়নে বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গতকাল শুক্রবার এ অনুদান দেয়ার কথা জানিয়ে এডিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সহায়তা প্রকল্পের প্রথম অংশ দিয়ে শরণার্থীদের জন্য মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণ ও বিভিন্ন সেবার উন্নয়ন করা হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমাররের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেনো স্থায়ী এবং নিরাপদ হয় সেজন্য আন্তর্জাতিক মহলকে সম্পৃক্ত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। আর প্রত্যাবাসন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী দাতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছেন। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ফলেই এডিবি, বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ অনুদান দিচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও প্রত্যাবাসনের চাপ অব্যাহত রাখবে সরকার।
এক বিবৃতিতে এডিবির প্রধান তাকিহিকো নাকাও বলেন, প্রকল্পের প্রথম ধাপে খাদ্যাভাব ও অন্যান্য ঝুঁকি কমাতে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সেবার উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে। গত মে মাসে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির বার্ষিক বৈঠকে ব্যাংকটির কাছে বাংলাদেশ সহায়তা চেয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে দুই কোটি ডলারের অনুদান সম্পূরক হিসেবে ধরা হয়েছে। ২-১/২ বছরে ১২ কোটি ডলার খরচ হবে বলে হিসাব করা হয়েছে। মৌলিক খাদ্য মজুদ, বণ্টন কেন্দ্র, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জরুরি প্রবেশ সুবিধার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সড়ক সংস্কার করা হবে।
এর আগে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি, পয়োনিষ্কাশন ও সামাজিক সুরক্ষায় বাংলাদেশকে ৪৮ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত মাসে প্রথম কিস্তিতে চলমান একটি স্বাস্থ্য খাতসহায়ক প্রকল্পের জন্য পাঁচ কোটি ডলার মঞ্জুর করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
এডিবি’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৌশলগত জলবায়ু তহবিলের অধীন নি¤œ-আয়ের দেশসমূহ কর্মসূচিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বৃদ্ধি করতে ২২.৪৪ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরি এবং এডিবি পরিচালিত ক্লিন এনার্জি ফাইন্যান্সিং পাটনারশীপ ফ্যাসিলিটির অধীন সহায়তা ভিত্তিক ক্লিন এনার্জি ফান্ড থেকে ৩ মিলিয়ন ডলার দেয়া হবে।
এডিবি’র সিনিয়র জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আইমিং ঝু বলেন, বাংলাদেশের পল্লী এলাকার দরিদ্র্য চাষীদের জন্য সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য উচ্চ মূল্যের ডিজেল খরচ সক্ষমতার মধ্যে পড়ে না এবং টেকসইও নয়। পল্লীর যে সকল এলাকায় গ্রীড বিদ্যুৎ পযার্প্ত নয়, সেখানে সেচ কাজে বিকল্প হিসেবে সোলার প্যানেল ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রকল্পটি জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে। জনগণের জীবন মান উন্নয়ন করবে। সেচ কাজ এবং অন্যান্য কৃষি কাজে ডিজেলের ব্যবহার হ্রাস করবে। দেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ৪.৫৮ শতাংশ সেচ কাজে ব্যবহার হয়। চাষিরা উচ্চমূল্যে গ্রীড বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। দেশে ১১.০৬ মিলিয়ন চাষি সেচ কাজের জন্য পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এতে প্রতি বছরে এক মিলিয়ন টন ডিজেলের প্রয়োজন হয়। এডিবি’র এই অর্থ যে সকল এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, সেখানে কমপক্ষে ২০০০ এসপিভি পাম্প স্থাপনে সহায়ক হবে।