অনিশ্চিত উদ্বোধনের তারিখ এলএনজি আসলেও ঘাটতি থাকবে ৭০ কোটি মিলিয়ন সিএফটি গ্যাস
স্বপ্না চক্রবর্তী : জাতীয় গ্রীডের সাথে আমদানিকৃত এলএনজি যুক্ত হলেও চাহিদার তুলনায় দিনে প্রায় ৭০ কোটি সিএফটি গ্যাসের সংকট থেকে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে প্রায় তিনমাস হয়ে গেলেও আমদানি করা এলএনজি কবে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চিয়তা। দক্ষ জনবলের অভাবেই জাতীয় গ্রীডে এলএনজি যুক্ত হবার প্রক্রিয়াটি এখনো সম্পন্ন হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
জানা যায়, বর্তমানে দেশের আবাসিক ও শিল্পখাতে প্রতিদিন সরবরাহ হচ্ছে ২৬শ ৪১মিলিয়ন সিএফটি গ্যাস। অথচ চাহিদা রয়েছে ৩৬০০ থেকে ৩৮০০ মিলিয়ন সিফটি গ্যাস। অর্থাৎ ঘাটতি ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিয়ন সিএফটি গ্যাস। কিন্তু এলএনজি আমদানি হচ্ছে দিনে ৫০০মিলিয়ন সিএফটি। কার্যত সরবরাহ হবে ৪৫৬ মিলিয়ন সিএফটি বা তারও কম।
আবার এলএনজি আমদানি উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। এইসব ডিমান্ড ইস্যু বাস্তবায়ন করতে গেলে আরো ৫০০মিলিয়ন সিএফটি গ্যাসের চাহিদা বাড়বে। ফলে পূর্বের ৫০০ থেকে ৭০০মিলিয়ন সিএফটি গ্যাসের ঘাটতির পাশাপাশি নতুন করে আরো ৫০০মিলিয়ন গ্যাসের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করছেন কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, গ্যাসের চাহিদাই যদি না মিটে তাহলে এত ব্যয়বহুল একটা প্রকল্প হাতে নেওয়ার দরকার কি? এলএনজি’র আমদানিকে নির্ভর করে গ্যাসের বাড়বে বই কমনে বলে আমি মনে করি না।
এদিকে এলএনজি নিয়ে আসা জাহাজটি ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের সীমানায় নোঙর ফেললেও এখনো জাতীয় গ্রীডে যুক্ত না হওয়ায় সরবরাহে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াসা।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সূত্রে জানা যায়, উদ্বোধনের জন্য মে মাসে পর পর ২টি তারিখ নির্ধারিত হলেও তা পিছিয়ে ২৯ জুন করা হয়। কিন্তু ওই তারিখে উদ্বোধন না হওয়ায় ৪ জুলাই এটির উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু একইদিন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহী এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, কিছু কারিগরি ত্রুটির কারণেই জাতীয় গ্রীডে এলএনজি যুক্ত করা সম্ভব হয় নি এ কয়দিন। তবে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই উদ্বোধন করা হবে বলে নির্শ্চিত করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায় ১১ জুলাই এলএনজি জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ কাজের উদ্বোধন হবে।
তবে জাতীয় গ্রীডে এর সরবরাহের তারিখ বার বার পিছিয়ে নেওয়াটাকে ঠিক মনে করছেন না বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসাইন। তিনি আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, প্রথমে আমরা জেনেছি এটির উদ্বোধন হবে ৪ জুলাই। তারপর শুনলাম ৮জুলাইয়ে এখন আবার শুনছি ১১ বা ১৫জুলাই এটির উদ্বোধন হবে। কিন্তু এর উদ্বোধন পিছানোটা অবশ্যই দেশের জন্য নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে। তিনি বলেন, এর কারণ হিসেবে সরকার নিজেই একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, জাহাজ থেকে এলএনজি ট্রান্সফারের পাইপলাইনের একজায়গায় লিক করেছে। এটা খুব জটিল একটা বিষয়। ভাসমান একটা জায়গা থেকে এটির সংযুক্তি আসলেই একটি জটিল প্রক্রিয়া। সমুদ্রে পাইপ তার নিজের মতোই উঠানামা করে। ফলে ওখানে একটা স্ক্রেচ তৈরি হয়েছে। সরকারের একজন সচিব ওখানটা পরিদর্শন করে ইতিমধ্যে বলেছেন একটা ওয়েলডিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২ দিন আগে জেনেছি ওয়েলডিং এর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখন সরকারের উর্ধ্বতন জায়গা থেকে যেহেতু তারিখ ঘোষণা এসেছে সেহেতু আমি মনে করছি খুব শিগগিরই এলএনজি সেবা পাবেন গ্রাহকরা।