১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকায় খাবার খেয়ে তারা লাফালাফি করে: প্রধানমন্ত্রী ‘কোটা বাদ দিলে তো আদালাত অবমাননায় পড়ে যাব’
আসাদুজ্জামান স¤্রাট: জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করে বলেন, দেশবাসী যদি মনে করেন তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ভুল করেননি, তারা দেশকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছে- তাহলে দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও তাদের সেবার করার সুযোগ দেবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সহযোগিতা কামনা করে বলেন, দেশের মানুষ একটু সুখের মুখ দেখেছে। কোন অশুভ শক্তি দেশের জনগণের এই সুখটা কেড়ে না নিতে পারে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাবো। দেশে যেন আবারও মারামাটি, খিস্তিখেউর, আগুণ দিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো পরিবেশ ফিরে না আসে।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বৃদ্ধির সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের কারণে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বৃদ্ধি করতে সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এতে করে কোন নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে আসার পথে কোন বাধা হবে না। কিন্তু এটা নিয়েও নারী আন্দোলনের অনেকে সমালোচনা করেন। তাদের বলবো এতো কথা না বলে আগামী নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিন, জনগণের কাছে যান, ভোট নিয়ে সংসদে আসুন। কিন্তু ভাল একটা কাজ করার পরও কেন জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন?
কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে আন্দোলন। এটা কী আন্দোলন নাকি। ঠিক তারা যে কী চায়, বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, সেটা কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারে না। আজকে আন্দোলন তারা করছে খুব ভালো কথা। বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, ছেলেপুলে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়ি আগুন দিয়ে পোড়ানো, বাড়ি ভাঙচুর করা, বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা, স্টিলের আলমারি ভেঙে গহনা, টাকাপয়সা সবকিছু লুটপাট করেছে। ভিসির পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এটা কি কোনও শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কি কোনও শিক্ষার্থী করতে পারে? কথায় কথায় বলে ক্লাস করবে না। ক্লাসে তালা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত কারা হবে? আমরা সেশনজট দূর করেছি। এদের কারণে এখন আবারও সেই সেশনজট। ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকায় খাবার, কোথায় আছে পৃথিবীর। আজ নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকায় খাবার খেয়ে তারা লাফালাফি করে। তাহলে সিট ভাড়া আর খাবারের বাজার দর যা রয়েছে, তাদের তা দিতে হবে। সেটা তারা দিক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলকারদেরই এখন গ্রেফতার করা হচ্ছে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উচ্ছৃঙ্খলা তো কখনও বরদাস্ত করা যায় না। যারা ভেন্ডালিজম করেছে এখানে যারা আ্ক্রমন করেছে তাদেরকে ছাড়া হবে না। তাদেরকে ছাড়া যায় না। কাজেই তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং তদন্ত করা হচ্ছে। তারা যত আন্দোলনই করুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ তারা লেখা পড়া শিখতে আসেনি। এর আগে বিরাধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোটা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অনেক বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে। তারা তো আমাদের সন্তান। তারা তো আব্দার করবেই। তারা তো চাকরি চাইবে। মাননীয় স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো তিনি যেন সহানুভুতির দৃষ্টি নিয়ে এই বিষয়টি বিবেচনা করেন।
তিনি বলেন, আমি তো বললাম কোটা বাদ দিতে কিন্তু হাইকোর্টের রায় আছে। তখন তো আমি আদালাত অবমাননায় পড়ে যাব। এটা তো কেউ করতে পারবে না। কিন্তু কেবিনেট সেক্রিটারি দিয়ে একটি কমিটিও করে দিয়েছি। তারা সেটা দেখছে। তাহলে এদের সমস্যাটা কোথায়? পনের টাকার সিট ভাড়া দিয়ে আজ তারা লাফালাফি করে। তারা হলের গেট ভেঙ্গে ফেলে দিবে, মধ্যরাতে হল থেকে বেরিয়ে যাবে, আমার টেনশন আমি বাঁচি না। সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আমি তাদের যার যার হলে পৌঁছে দিয়ে ঘুমাতে গেছি। এটা কি আন্দোলন নাকি? আর ভিসির বাড়িতে সিসি ক্যামের ভেঙ্গে ফেলেছে, চিপস নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা জানে না আশেপাশে আরও ক্যামেরা ছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরা দেখে একটা একটা করে খুঁজে বের করা হচ্ছে। তাই তাদের বিচার হবেই।
তারা হলের গেট ভেঙে ফেলে দেবে। মধ্যরাতে হল থেকে ছাত্রীরা বেরিয়ে যাবে। আমার টেনশনে আমি বাঁচি না। আমি পুলিশকে, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলেছি এই মেয়েদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। ভোর ছয়টা পর্যন্ত জেগে থেকে যার যার হলে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি ঘুমাতে গিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বলেছি, কোটা সংস্কার আমরা করবো। আমি তো বলেছি টোটাল কোটা বাদ দিতে। আমরা তো কেবিনেট সেক্রেটারিকে দিয়ে একটি কমিটিও করে দিয়েছি। তারা সেটা দেখছে। তাহলে এদের অসুবিধাটা কোথায়?’