স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবলবিশ্বের বড় সব দলগুলোকে বিদায় ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা হাকান সুকেরের দল যা পারেনি এবার সেটাই করে দেখিয়েছে লুকা মদরিচের দল। আর মাত্র একটা ম্যাচ বাকি। যে ম্যাচে ফ্রান্সকে হারাতে পারলেই ইতিহাসে ঢুকে যাবেন মদরিচ, পেরিসিচ, রাকিটিচ আর সুবাসিচরা। ক্রোয়েশিয়া ফুটবলকে স্বর্ণযুগে নিয়ে যাওয়ার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ক্রোয়েটরা। দলের গোলকিপার ড্যানিয়েল সুবাসিচ দলের যাবতীয় সাফল্য ‘হারিয়ে যাওয়া বন্ধু’ কাস্টিচকে উৎসর্গ করতে চান।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে দু’বার টাইব্রেকারের বাধা পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে ক্রোয়েশিয়া। যার পুরো কৃতিত্বই দিতে হয় ড্যানিয়েল সুবাসিচের। প্রত্যেকবার বিপক্ষের ফুটবলার শট নিতে আসার আগে দুই হাত ও মুখটা আকাশের দিকে তুলে কী যেন প্রার্থনা করেন সুবাসিচ। কার জন্য, কেন এই প্রার্থনা? ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষকের এই ঘটনার পেছনে রয়েছে এক মর্মস্পর্শী কাহিনি।
দশ বছর আগের কথা, ক্রোয়েশিয়ার প্রথম ডিভিশন লিগে জাদারের হয়ে খেলতেন সুবাসিচ। সেই দলে তার সব থেকে কাছের বন্ধু ছিলেন এই সতীর্থ হ্রভোজে কাস্টিচ। দু’জনের এতটাই সখ্যতা ছিল যে একসঙ্গে থাকতেন, খেলতেন, ঘুরে বেড়াতেন। হঠাৎ একদিন এইচএনকে সিবালিয়ার বিরুদ্ধে খেলা চলছিল। ম্যাচের বয়স সবে চার মিনিট হয়েছে একটা ব্যাকপাস পেয়ে বাঁদিকে থাকা কাস্টিচকে দেন সুবাসিচ। আচমকা লাফিয়ে ওঠা বলটা নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যায় পড়েন কাস্টিচ। ততক্ষণে সিবালিয়ার এক ফুটবলার চলে এসেছেন কাস্টিচের কাছে। কিন্তু কাস্টিচ টাল সামলাতে না পেরে তিন ফুট দূরে থাকা কংক্রিটের দেওয়ালে সজোরে মাথা ঠুকে পড়ে গেল। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয় কাস্টিচের।
কিন্তু পাঁচ দিন ধরে কোমায় থাকার পর না ফেরার দেশে চলে যান কাস্টিচ। প্রিয় বন্ধুর এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি সুবাসিচ। বন্ধুকে হারিয়ে ক্রমশ ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলেন। কয়েকদিন জন্যে চলে যান আমেরিকায়। রাতে ঘুমোতে পারতেন না তিনি। এক দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেড়াত তাকে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে টাইব্রেকারে তিনটে সেভ করে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সুবাসিচ। তিনি বলেছিলেন, ‘সেদিন যদি বলটা ওকে না দিতাম, তাহলে আজ ও বেঁচে থাকত। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন সেদিন ওকে পাস দিলাম?’
দশ বছর কেটে গেলেও, সেই ট্রমা থেকে যেন বেরোতে পারেননি সুবাসিচ। ডেনমার্ক ম্যাচে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার পর জার্সি খুলে ফেলেছিলেন। জার্সির নিচে থাকা টি-শার্টে কাস্টিচের ছবি তুলে ধরেন সবার সামনে।
সুবাসিচ বলেন, ‘ওই ঘটনার পর ঠিক করেছিলাম, যতদিন খেলব, যেখানে খেলব, ক্যারিয়ারের বাকি সব ম্যাচে কাস্টিচের জার্সি পরে খেলব।’ ক্লাব হোক বা জাতীয় দলের ম্যাচ হোক সুবাসিচের জার্সির নিচে থাকে কাস্টিচের ছবি। জিনিউজ