বিদায় রাশিয়া, স্বাগতম কাতার
আক্তারুজ্জামান : ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবল এমনই একটা জিনিস যেটার মজা শেষ হয়েও শেষ হয় না। বরং বলা যায় শেষের থেকেই শুরু হয়ে যায় আরও একটা বিশ্বকাপের আয়োজন। রাশিয়াতেই যেমন প্রতিটা শহরের ব্যস্ত অঞ্চলে ভিডিও ওয়াল লাগিয়ে দিয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে শেষ রাশিয়া বিশ্বকাপ, আবার দেখা হবে কাতারে। বিশ্বকাপের বোধহয় এটাই মজা। রাশিয়ার আসর যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয়ে গেল কাতার বিশ্বকাপ। আগামী ২০২৬ সালে কাতারে বসবে ফুটবল বিশ্বকাপের বাইশতম আসর।
প্রতি চার বছর পরপর শুরু হয় ৩২ দলের মহাযজ্ঞ। যেখানে শুধু খেলার লড়াই না, চলে জাতীয়তাবাদের লড়াইও। রাশিয়াতেও দেখা গেছে সেই একই চিত্র। প্রিয় দলের সমর্থন যোগাতে গলা ফাটিয়েছেন ভক্তরা। সমর্থকরা প্রিয় দলের জয়ের পর উৎসব করতে যেমন ভোলেন না, তেমন দল হেরে যাওয়ায় পানিতে ভেসে যায় তাদের দুই চোখ। কখনো কখনো ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা। হতাশা-ব্যর্থতা কাটিয়ে পর্যায়ক্রমে গ্রুপ পর্ব-দ্বিতীয় পর্ব-কোয়ার্টার ফাইনাল-সেমিফাইনাল এরপর ফাইনাল এভাবেই এগিয়ে যায় প্রতিটা বিশ্বকাপের আসর। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
রাশিয়া বিশ্বকাপের আসর এ যাবৎকালের সবচেয়ে সেরা আসর বলে ঘোষণা করেছেন ফুটবলের শাসক সংস্থা ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ফুটবলকে আরো এগিয়ে নিতে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তিনি। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে তিনি সে দেশগুলোকে বিশেষভাবে আহ্বান জানান। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপ যেন ছিল ইউরোপীয়দের জয়জয়কার। রাশিয়ার আসরে এমন এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে যা আগের বিশবারের আসরে কখনোই ঘটেনি। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এবং জার্মানির কেউই সেমিফাইনাল খেলেননি এরকম ঘটনা এবারই প্রথম ঘটেছে।
২০১০ ও ২০১৪ আসরের ধারা অব্যহত রেখে এবারের আসরেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় শিরোপাধারী জার্মানি। রাশিয়ার কাছে হেরে দ্বিতীয় পর্ব থেকে দেশের বিমান ধরতে হয় স্পেনের। তাছাড়া ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। বেলজিয়ামের কাছে হার মানতে হয় ব্রাজিলের। শেষ পর্যন্ত রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল হয় অল-ইউরোপ। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব ফুটবল এরকম ঘটনা দেখলো। বিরল ধরণের ঘটনার জন্ম দিয়েছে রাশিয়া। কোরিয়ার কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরেছিল জার্মানি। যা দেখে নির্বাক হয়েছিল ফুটবলবিশ্ব।
তবে মনে থাকার মতো দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে প্রিয় দেশ জাপান। দ্বিতীয় পর্বে বেলজিয়ামের কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচে সারা পৃথিবীর মানুষের মন জয় করেছিল জাপানীরা। অসাধারণ ফুটবল ও পরিচ্ছন্নতার অনন্য নজির স্থাপন করেছিল হোন্ডারা। গ্রুপপর্বে সেনেগালের সঙ্গে অসামান্য প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ার পর সমান পয়েন্ট ও রেটিং দাঁড়ায়। শেষ ষোলোর জায়গা নির্ধারণে প্রথমবারের মতো ফিফা আশ্রয় নেয় ফেয়ার-প্লে’র। পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলার সুবাদে প্রথমবারের মতো জাপান এই সুযোগ পেয়েছিল।
প্রতিবার আসর জুন-জুলাইয়ে বসলেও ঐতিহ্য ভাঙতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। কেননা কাতার দিয়েই নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে ফিফার বাইশতম বিশ্বকাপ আসর। তীব্র গরম আবহাওয়া থেকে রেহাই পেতেই ফিফা এই উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও ফিফার পরিকল্পনায় থাকা ৪৮ দলের বিশ্বকাপের দেখাও মিলতে পারে কাতারে। তবে সব শেষে বলা যায় ফুটবল সব সবময় আনন্দ দেয়। আর বিশ্বকাপের মজা কখনো ফুরায় না। একটি আসর শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় পরের আসরের উন্মাদনা। তাই বলতে হচ্ছে বিদায় রাশিয়া, স্বাগতম কাতার।