সাড়ে ৪ শ কোটি টাকার এফডিআর, তবু ফান্ড সংকটে হাউস বিল্ডিং
ওয়াহিদুজ্জামান : প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকার এফডিআর থাকার পরও চরম ঋণ ভোগান্তিতে আছে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সংকট সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। প্রায় ২ হাজারের মতো ঋণ আবেদনের ফাইল জমা পড়লেও সেই চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে পারছেন না তারা। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকার কারণে ঋণদানের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝেই কিছুটা স্থবিরতার সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্সের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এবার ঋণ রিকভারি থেকে পাওয়া গেছে ৫১০ কোটি টাকা। এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক খরচ ১৬০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলে এখানে বিনিয়োগযাগ্য অর্থের পরিমাণ থাকে ৩৫০ কোটি টাকা। এবার সরকারিভাবে ঋণ হিসাবে ফান্ড পাওয়া গেছে ১৫০ কোটি টাকা। ফলে কর্পোরেশনটির বিনিয়োগযোগ্য পুঁজির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ শত কোটি টাকা। বর্তমানে যে পরিমাণে ঋণের জন্য আবেদন জমা পড়েছে, তাতে প্রয়োজন ৭ শত থেকে ৮ শত কোটি টাকার মতো। তবে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্সের মতে, প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক ঋণ বিনিয়োগ ধরে রাখতে ১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।
হিসাব মতে, হাউস বিল্ডিংয়ের বিনিয়োগযোগ্য ঋণের ফান্ড রয়েছে ৫ শ কোটি টাকা। আর এফডিআরে জমা আছে ৪ শ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, এফডিআরের টাকা যদি বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলে যুক্ত করা হয় তবে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ সক্ষমতা দাঁড়ায় প্রায় ৯ শ কোটি টাকা। অর্থাৎ যার ফলে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে কোনোরকম ঋণ সংকট না থাকারই কথা। এ সকল বাস্তবতা থাকার পরও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ক্রমাগত ঋণ চাহিদা পূরণে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। তারা রিকভারি টাকাকে সামনে রেখে ঋণ চাহিদা পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে গ্রাহকরা যথাসময়ে ঋণ পাচ্ছেন না। প্রতিষ্ঠানটিতে ঋণ বিনিয়োগের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কী কারণে, কার প্রয়োজনে কোটি কোটি টাকা এফডিআর করে রাখা হচ্ছে তার সদুত্তর পাচ্ছে না কেউ। ঋণপ্রত্যাশী ভুক্তভোগীরা বলেন, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স টাকা এফডিআর করে না রেখে এই টাকা ঋণখাতে বিনিয়োগ করলে অনেক লাভবান হবে। এতে দেশের অসংখ্য মানুষ যেমন উপকৃত হবে তেমনি প্রতিষ্ঠানটির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে, আমরা দৈনিক আমাদের অর্থনীতির পক্ষ থেকে কথা বলতে চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তীর সাথে। কিন্তু তার অসুস্থতার জন্য তিনি সময় দিতে পারেননি। তবে, কর্পোরেশনটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সেলিম উদ্দিনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, পুরনো নিয়মে হাউস বিল্ডিং চলছে। বিশেষ করে ঋণের সিলিং পদ্ধতি দ্রুত পরিবর্তন জরুরি। চাহিদা অনুযায়ী হাউস বিল্ডিং গ্রাহকদের ঋণদানের চেষ্টা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে ৩ শত কোটি টাকা ঋণ সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে। ফান্ডের সেরকম কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমরা অবশ্যই এফডিআর ভেঙে ঋণ খাতে বিনিয়োগ করবো।