বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা
কায়কোবাদ মিলন: যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ক্রমবর্ধবান বাণিজ্য যুদ্ধে দু’দেশের বিদ্যমান জটিল সর্ম্পককে আরও জটিলতর করে তুলবে এবং আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ভিন্ন কোন দেশে কোন কোম্পানির সরাসরি বিনিয়োগকে বলা হয় ডাইরেক্ট বিনিয়োগ। আমেরিকায় বিনিয়োগ অনেক কোম্পানির কাছেই কাঙ্খিত। সেই সুবাদে বিদেশি বিনিয়োগ লাভে ২০০৬ সালে আমেরিকাই ছিল শীর্ষে। সেই হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিনিয়োগ ছিল নগণ্য। বিশ্বে চীনের ইমেজ নিয়েও তখন সমস্যা ছিল। চীনের ২/১টি বড় কোম্পানি যখন ছোট ছোট কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগে মনস্থ করল তখন তা বড় বড় হেডিংয়ে প্রকাশিত হতে থাকল। অনেকে বিষয়টিকে আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে আখ্যা দিল ।
আন্তর্জাতিক ব্যবসা নিয়ে গবেষণা করেন এমন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হল চীনাদের বড় হোক আর ছোট হোক কোন ধরণের বিনিয়োগই আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোন হুমকি নয় । তাদের মতে দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে যে সম্পর্কের যে শীতলতা শুরু হয়েছে তার নেতিবাচক ফল হবে সুদূরপ্রসারি। এই মহলটির মতে আমেরিকায় বর্তমানে বাণিজ্যেরত ২৩২ বিনিয়োগকারীর মধ্যে অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোন হুমকি বা ঝুঁকি নয়।
বেইজিংভিত্তিক লেনোভো ২০০৪ সালে ১শ’ ৭৫ কোটি ডলারে আইবিএমের পিসি ব্যবসায় গ্রহণ করে। আবার হায়ার কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিকের একটি ইউনিট কিনল ২০১৬ সালে। দাম দিল ৫শ’ ৬০ কোটি ডলার। এসব নিয়ে কোন হইচই হলনা । সাম্প্রতিককালে চীনারা যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য কোম্পানিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে । তবে একথাও সত্য, চীনাদের বিনিয়োগ আরও অনেক বেশি হতে পারত। তাদের সে সামর্থ রয়েছে । কিন্তু ট্রাস্পের বিভিন্ন বক্তব্য চীনাদের বিনিয়োগের গতিকে মন্থর করে তুলছে। গত বছর চীনারা ২৪শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আর ২০১৬ সালে করেছিল ৫ হাজার ৪শ’ কোটি বিনিয়োগ করেছে চীনারা। এর মধ্যে সবচে বেশি আবাসন খাতে । নিউইয়র্কের পার্ক এভিনিউতে তারা তাদের মোট বিনিয়োগের ১৫ ভাগ অর্থ্যাৎ ২৬শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠাণ ব্লাকরকে শতকরা ১৪ ভাগ বিনিয়োগ করেছে এবং আইবিএম এবং মটোরোলায় শতকরা ১৩ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে ।
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার দোহাই দেখিয়ে চীনের অনেক বিনিয়োগ আটকে দেয়া হয়েছে। অনেক বড় বড় প্রকল্প এ কারণে আলোর মুখ দেখেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হংকংয়ের হাটচিসন কোম্পানি একটি টে-ার থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় কেননা যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বিনিয়োগ কমিটি প্রকল্পের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাকর্মকর্তারা এই বলে আপত্তি করতে থাকেন যে কোম্পানির চেয়ারম্যান চীন সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের খুবই ঘনিষ্ঠ। দুই বছরের মাথায় চীনের তেল কোম্পানি কনক কোম্পানি ১৮.৫ বিলিয়নে ইউনোকলকে কিনতে চাইছিল। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা সেই ডিল বাতিল করতে সমর্থ হয়।
১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফোর্ড বৈদেশিক বিনিয়োগ কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে জাতীয় নিরাপত্তার কারণে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপারে ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয় । এই সময় অন্য দেশের তুলনায় চীনা কোম্পানিগুলো তুলনামূলক বেশি নজরদারির আওতায় আসে । লক্ষ্যণীয় এই কমিটি যে কোন সময় তদন্ত শুরু করতে পারে । হাটচিসনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কমিটি ৫টি ক্ষেত্রে ভেটো দিয়েছে। এভাবে রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষার ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা পর্যন্ত চীনের বহু প্রকল্প স্থগিত করেছেন ।
ট্রাম্প গত বছর ট্রাম্প চীনা সংস্থা ক্যানিয়ন ব্রীজকে যুক্তরাষ্ট্রের চিপ মেকার ল্যাটিসে সেমিক-াকটর কোম্পানিকে বিনিয়োগে বাধা দেন। এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ কমিটিকে আরও ক্ষমতা দেয়ার জন্য ট্রাম্প দ্বিদলীয় ভিত্তিতে একটি বিল আনতে পরামর্শ দিয়েছেন। উল্লেখ্য,চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধ চীনাদের লগ্নি যে হ্রাস করবে তা বলাই বাহূল্য । ট্রাম্প বলেছেন, চীনের বিরুদ্ধে তার রুখে দাঁড়ানো অহেতুক নয়। চীনারা পাশ্চাত্যের টেকনোলজি চুরি করছে। তারা মেধাস্বত্তের বিষয়টি গ্রাহ্যের মধ্যে আনছে না। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতিতে অভিজ্ঞরা বলছেন, চীনের উত্থান পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের চীনা বিনিয়োগে বাধা প্রদান করা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে এমন কৌশল অবলম্বন যাতে সে অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে বিরোধ এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে পারে । ইয়ন