‘একজন মুক্তিযোদ্ধা চান তার প্রাপ্য সম্মানটা’
আশিক রহমান : কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পুরো কোটা ব্যবস্থাই বাতিল করে দিলেন, এখন তিনিই বলছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা বা পর্যবেক্ষণ আছে জানতাম না। উনার বাবার (বঙ্গবন্ধু) তৈরি সংবিধানে পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছে যে, কোনো কোটা থাকবে না। ফান্ডামেন্টাল রাইটসের ২৯ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, সকলের সমান অধিকার ও প্রতিদ্বন্দ্বীতার ভিত্তিতে সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বাহাত্তর সালের সংবিধানের কোথাও মুক্তিযোদ্ধা কোটার কথা লেখা নেই। সংবিধানের ২৯-এর ৩ ধারায় বলা আছে, পশ্চাৎপদ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে একটা কোটা থাকবে, আর কারও জন্য নয়। এমন মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে আজকে সবাই মিলে অপমান করছে। ত্রিশ লাখ শহীদের নাম আমরা প্রকাশ আজও করতে পারলাম না। করার চেষ্টাও করলাম না। প্রতিটি ইউনিয়নে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থাকা উচিত। তা না করে তাদের নাম বিক্রি করে খাচ্ছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, কোটা বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার যে অবস্থান সংসদে ঘোষণা করেছিলেন তা থেকে তিনি অবশ্যই সরে এসেছেন। আমার মনে হয়, ভুল করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়ি আক্রমণ অত্যন্ত গর্হিত কাজ, এটা পুলিশ বিভাগের ব্যর্থতা। উপাচার্যের বাড়ির সামনে ৫ জনের পুলিশি প্রহরা ছিল, তার থেকে একশ গজ দূরে শাহবাগ থানা, অন্যান্য ব্যবস্থাও আছে। সেখানে এ জাতীয় ঘটনা ঘটল, এতে তো পুলিশের শাস্তি হওয়া উচিত। তাদে ব্যর্থতার অনুসন্ধান করা উচিত। বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। উপাচার্যের বাড়িতে আক্রমণ খুব খারাপ, গর্হিত ও দুর্ভাগ্যজনক। এটা যেমন খারাপ কাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অপমান করাও তার চেয়ে কম খারাপ কাজ নয়। আজকে আমি আমার বক্তব্য রাখতে পারব না, পথে বের হতে পারব না, এটা কী ধরনের কথা। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগ যারা করে তারাও তো ছাত্র। ছাত্রলীগের যারা খারাপ কাজ করছে, মদদ না থাকলে তো তা তারা করতে পারত না। চট্টগ্রামের এক সহকারী অধ্যাপক বাড়িঘর ছেড়েছেন। ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল হতে হবে। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চালাকির খেলা খেলছেন। তিনি হাইকোর্টের কথা বলছেন, সেই বিচারকের কথা তো তিনি একবারও বলছেন না। এটা আসলে একটা পর্যবেক্ষণ ছিল। কোর্টের উপরে আমাদের সংবিধান। সংবিধানের কোথাও বলা হয়নি যে, কোটা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করা হবে অন্যভাবে।
তিনি বলেন, রাজনীতি করার জন্য আমরা এসব চালাকির কথাবার্তা বলছি। জানি না কে বা কারা প্রধানমন্ত্রীকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমার সঙ্গে এগ্রিমেন্ট ছিল নাকি বাড়িঘর, চাকরিবাকরি দিতে হবে। আমি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের জীবন দিতে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। একজন মুক্তিযোদ্ধা তার প্রাপ্য সম্মানটা চান। চাকরি বা ঘুষ দিয়ে সম্মান জানানো যায় না। মুক্তিযোদ্ধাদের তো বেতন-ভাতা, বোনাস দেওয়া হচ্ছে। আর কতদিন? দেশের দুকোটি মানুষ বেকার। ৪৭ ভাগ ¯œাতকের চাকরি নেই। সবকিছু তো আমাদের দেখতে হবে। এটা করা দরকার।