অভিনয় সূত্রে পরিচয়, বাসায় ডেকে এসবির পরিদর্শককে হত্যা
মাসুদ আলম: পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান টেলিভিশনের বিভিন্ন ক্রাইম সিরিয়ালেও অভিনয় করতেন। সেই সূত্রে ৫ বছর ধরে রহমত উল্লাহ নামে এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তার। রহমতের পরিচিত মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফিও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অভিনয় করেছেন। রহমতের সঙ্গে আফরিনের মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো। সেই সূত্রে আফরিন ফোন করে ৮ জুলাই রহমতকে তার বান্ধবির বার্থডে পার্টিতে আমন্ত্রণ জানায়। রহমত ওই বার্থডে অনুষ্ঠানে পুলিশ বন্ধু মামুনকেও যাওয়ার অনুরোধ করেন। আর বনানীর সেই বার্থডে অনুষ্ঠানে গিয়েই খুন হন মামুন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন।
তিনি বলেন, বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামুন হত্যায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করে মহানগর পূর্ব গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মিজান শেখ, কথিত মডেল মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফি, সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া, ফারিয়া বিনতে মীম। আফরিনের ঠিকানা অনুযায়ী বনানীর মডেল টাউনস্থ রোড নং-২/৩ এর ৫ নং বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে বার্থডে অনুষ্ঠানে যায় রহমত ও মামুন। কিছুক্ষণ পর স্বপন, মিজান, দিদার, আতিক বাসায় ঢুকে অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে মামুন ও রহমতকে মারধর করে। তারা বলে আফরিন খারাপ মেয়ে, তোরাও খারাপ। তারা নিজেদের প্রশাসনের লোক পরিচয় দেয়। চক্রটির টার্গেট ছিল রহমতকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করা। কিন্তু মামুন নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেওয়ায় তাদের টার্গেট এলোমেলো হয়ে যায়। মারধরের একপর্যায়ে মধ্যরাতে মামুন মারা যায়। এতে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং রহমতের বাঁধন খুলে দেন। রহমত মামুনকে ডেকে আনায় ফেঁসে যাবেন ভেবে সেও তাদের সঙ্গে মিলে যান। পরদিন সকালে মামুনের মরদেহ বস্তায় করে তারা রহমতের গাড়িতে ওঠান। এদের মধ্যে স্বপন, দিদার ও আতিক সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত সদস্য বলে জানা গেছে। তারা গাড়ি নিয়ে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টে যান এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। মিজান মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন এবং ক্যান্টনমেন্টের একটি পাম্প থেকে পেট্রোল কেনেন। সন্ধ্যার দিকে তারা গাড়ি নিয়ে কালীগঞ্জের দিকে যান। এরপর উলুখোলা জঙ্গলে লাশ নামিয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। গত ১০ জুলাই রহমতকে গ্রেফতার করে এবং ওই দিন মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রহমতের তথ্যের ভিত্তিতে ওই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। বনানীর ওই বাসাটি দুই মাস আগে ভাড়া নিয়েছিল চক্রটি। মানুষকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। আর তাদের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন রবিউল। ওই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল নজরুল নামের একজন। এ ঘটনায় জড়িত অন্তত আরও চারজনের বিস্তারিত নাম পরিচয় পাওয়া গিয়েছে।