আবারও শেকড় সদৃশ বস্তু গজাচ্ছে আবুলের হাত-পায়ে
রিকু আমির: আবারও শেকড় সদৃশ বস্তু গজাতে শুরু করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অবস্থান করে প্রায় আড়াই বছর একটানা চিকিৎসা গ্রহণকারী আবুল বাজনাদারের হাত-পায়ে।
তার বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। চিকিৎসা চলাকালীন ভূমিহীন ২৮ বছর বয়সী আবুলকে পাইকগাছার কিছু জায়গা ক্রয় করে দান করেন প্রখ্যাত চর্মবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। বর্তমানে সেই জায়গায় নির্মাণ করা বাড়িতে পরিবার নিয়ে বাস করছেন আবুল। যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে আবুল এ প্রতিবেদককে বলেন, শেকড় তো আবার গজাচ্ছে। ব্যথায় রাতে ঘুমাতি পারি না।
২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢামেকে ভর্তির পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, আবুল ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত । রোগটি ‘ট্রি ম্যান’ (বৃক্ষমানব) সিনড্রম নামে অধিক পরিচিত। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর ছোট-বড় ২৩টিরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে আবুলের দুই হাত ও দুই পায়ে। সর্বশেষ অস্ত্রোপচার হয় গত বছরের ২৭ জুলাই।
গত ২৭ মে আবুল ঢামেক বার্ন ইউনিটের ৬১১ নম্বর কেবিন থেকে খুলনা চলে যান। তার চিকিৎসার শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন ২৮ মে জানিয়েছিলেন, এদিন সকালে চিকিৎসকরা কেবিনে গিয়ে আবুল বাজনাদারকে পাননি।
ঢামেক কর্তৃপক্ষ আবুলের কাগজপত্রে তাকে ফেরারি হিসেবে দেখায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবুল বাজনাদার এ প্রতিবেদকের প্রশ্নে বলেন, আমি তো ভাল হব না। এটা আমি শুনেছি। তাহলে খালি খালি থেকে লাভ কী। তাছাড়া কিছু চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ড বয় আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। এতে আমি ভীষণ কষ্ট পাই।
ঢাকা মেডিকেলে আবার যাবেন কি-না, প্রশ্নে তিনি বলেন, গিয়ে কী লাভ? অন্য জায়গায় দেখব কিছু করা যায় কি-না।
একটি প্রশ্নে অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন এ প্রতিবেদককে বলেন, শুধু আবুলই নয়, যে কেউ যদি আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসে, তাহলে ফিরিয়ে দেয়ার উপায় নেই। আবুলের বিষয়ে আমরা এখনও আন্তরিক।
চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী- ট্রি-ম্যান সিনড্রোমের কোনো চিকিৎসা নেই। এটা জিনঘটিত রোগ। আবুলের আগে পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মাত্র তিনজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালের মার্চে রোমানিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় কৃষক আয়ন তোয়াদের। পৃথিবীতে সন্ধান পাওয়া প্রথম বৃক্ষ মানব তিনি। রেডিয়েশন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তার দেহে অস্ত্রপচার করা হয়। ধারণা করা হয়, পরে ক্যান্সার সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন আয়ন। তিনি জীবিত নেই।
২০০৭ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় ৩৪ বছরের দেদে কসওয়ারার। ২০০৮ সালে অস্ত্রপচারের পর তার দেহ থেকে অপসারণ করা হয় ছয় কেজি ওজনের আঁচিল। বিরল সেই অস্ত্রপচার নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে ডিসকভারি চ্যানেল। পরে অবশ্য দেদের শরীরে ফিরে আসতে থাকে রোগের লক্ষণগুলো। চিকিৎসকেরা তাকে বছরে দুইবার করে অস্ত্রপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি সেই চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনিও জীবিত নেই।
২০০৯ সালে ডিসকভারি চ্যানেল ‘ট্রিম্যান মিটস ট্রিম্যান’ শিরোনামে আরেক অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে। দেদে কসওয়ারার এলাকায় সন্ধান পাওয়া ওই ব্যক্তি চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে।