ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট জার্মান কোম্পানির সঙ্গে তিন হাজার ৩শ কোটি টাকার চুক্তি সই
সাইদ রিপন: অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর দেশের ৬৪ জেলায় তিন কোটি ই-পাসপোর্ট নির্মাণ করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টের নিরাপত্তা সম্বলিত মোট ৩০ মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হবে। ‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেক সভায় গত মাসে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট চালু করতে জার্মান কোম্পানির সাথে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অধিদফতর। প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস জিএসবিএইচের সঙ্গে চুক্তির মূল্য ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৮ সালে বাস্তবায়ন করবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং বিশেষ অতিথি জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নেইলস আনেন উপস্থিত ছিলেন। এ চুক্তির ফলে বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান ও জার্মানির ভেরিডোস জিইউএমবিএইচ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কুন্স।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ বছরের ৩০ জুন এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) প্রকল্প শেষ হলেও আপাতত আবেদনকারীদের এমআরপি দেয়া হবে। আশা করি শিগগিরই ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করতে পারব। সিইও কুন্স বলেন, আমরা ৫০টি দেশের ই-পাসপোর্ট করেছি। আমাদের নতুন করে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেয়ায় আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই পাসপোর্টে রঙিন ছবিসহ পলিকার্বনেটেড ডাটাপেইজ থাকবে, যা শুধুমাত্র পৃথিবীর ২টি দেশে রয়েছে।
জানা গেছে, জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস ৩ কোটি ই-পাসপোর্টের বুকলেট দিবে বাংলাদেশকে। এ লক্ষ্যে ঢাকার উত্তরায় একটি এসেম্বলি কারখানা স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলো স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনায় (ই-গেইট) আওতায় আনা হবে। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোয় ৫০টি ই-গেইট স্থাপন করা হবে। ভেরিফিকেশনে ব্যক্তির তথ্য সঠিক পাওয়া গেলে ই-গেইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এই পদ্ধতিতে দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা অধিক কার্যকরভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হাতে লেখা পাসপোর্ট প্রচলিত ছিল। ২০১০ সালে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রদান শুরু হয়। এমআরপিতে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকলেও এতে জালিয়াতির সুযোগ থেকে যায়। অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও নিরাপদ করতে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ই-পাসপোর্ট হলো বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয়ের সত্যতা থাকে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি করা কঠিন হবে।