পরীক্ষার সময় কমানোর পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
হুমায়ুন কবির খোকন: প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় যে পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে তার প্রশংসা করে পুরো পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার কথা ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, এখন পরীক্ষা শেষ করতে যে রকম প্রায় দুই মাস সময় লেগে যায়, তা কমিয়ে আনতে পারলে শিক্ষার্থীদের যেমন আরো বেশি মনোযোগী করা যাবে, পরীক্ষা নিয়ে ‘গুজব আর অপপ্রচারের’ হাত থেকেও মুক্তি মিলবে।
বৃহস্পতিবার গণভবনে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এই পরামর্শ আসে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,একটা বদনাম হত প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্নপত্র ফাঁস সমস্যাটা কিন্তু শুধু আমাদের দেশে না। অনেক উন্নত দেশেও এই সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে কারণ ডিজিটাল হওয়াতে ডিজিটালের যেমন সুফল আছে, মাঝে মাঝে কিছু কুফলও এসে যায়। খুব তাড়াতাড়ি সেটা প্রচার হয়ে যায়। এবার এইচএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ না উঠায় সন্তোষ প্রকাশ করে সরকার প্রধান বলেন, এবারে যে পদ্ধতিটা নেওয়া হয়েছে, সেটা খুবই চমৎকার। আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীরা চলে যাবে পরীক্ষার হলে। ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে, কয়েকটা সেটের প্রশ্নপত্র থাকে, কোন সেটটা দেওয়া হবে। তার ফলে নকল বন্ধ হয়েছে।
তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা একটু পড়াশোনা করলেই যেখানে এরপর পৃষ্ঠা ৭, কলাম
(শেষ পৃষ্ঠার পর) ভালো রেজাল্ট করতে পারে, সেখানে তারা নকল করবে কেন? এবার পরীক্ষা শেষ করার পর ৫৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে পারায় শিক্ষক এবং শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,একটা ছোট্ট অনুরোধ আমার থাকবে, সেটা হল পরীক্ষার সময়টা। পরীক্ষার একটা দীর্ঘ সময়.. দোসরা এপ্রিল পরীক্ষা শুরু, আর ২৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা। এই এত দীর্ঘ সময়, বোধ হয় রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষার সময়টা কিভাবে কমিয়ে আনা যায়। শেখ হাসিনা তার সময়ের পরীক্ষা পদ্ধতির কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখন তো আমাদের দুই বেলা করে পরীক্ষা দিতে হত। সকালে এক পেপার, বিকালে এক পেপার। আমাদের তো দম ফেলার সময়ই থাকত না, সাত দিনে পরীক্ষা শেষ। ১০টা সাবজেক্ট, মাঝখানে দুইদিন ছুটি ধরে আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত।
আজকের বাস্তবতায় পরীক্ষার সময় কি করে কমানো যায়, তা খুঁজে দেখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এটাকে আরেকটু কমিয়ে আনার ব্যবস্থা যদি করতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনি দেখবেন, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও তাড়াতাড়ি হবে, আর এখানে ওই যে নানা ধরনের কথা প্রচার টচার, অপপ্রচার, তার হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে মনোবল না হারাতে এবং পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের বলেন, এখন থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়লে কৃতকার্য হবে। নিজের ইচ্ছায় পড়তে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার পরামর্শ- ছেলেমেয়েদের বকাঝকা করবেন না। কেন খারাপ করল, তা খুঁজে বের করুন। প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন,আমি একটা কথা বলব আমাদের ছেলেমেয়েদের, একটা সম্পদ- শিক্ষা, এই সম্পদটা কেউ কখনো কেড়ে নিতে পারবে না। ছিনতাইকারী কখনো নিতে পারবে না, চুরি ডাকাতি করেও নিতে পারবে না। শিক্ষা হচ্ছে সবচাইতে বড় সম্পদ। কাজেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যাবে ।