পাকিস্তানে যেই বিজয়ী হোক, মুদ্রা সংকট হবে তার জন্য সবচেয়ে বড় এজেন্ডা
সাউথএশিয়া মনিটর : পাকিস্তানে আগামী সপ্তাহের নির্বাচনে যেই দলই বিজয়ী হোক না কেন, তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে মুদ্রা সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। কারণ এই সঙ্কট দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির গতি টেনে ধরেছে। আর এই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান হবে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) কাছ থেকে আরেক দফা সহায়তা নেওয়া।
গত অর্থবছরে পাকিস্তানের অর্থনীতি ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। গত ১৩ বছরের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে চারবার রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে। সুদের হার বেড়েছে তিনগুণ।
পাকিস্তান তার প্রয়োজনীয় তেলের ৮০ শতাংশই আমদানি করে থাকে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানের এই মুদ্রা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ৩০ জুন যে অর্থবছর শেষ হয়েছে, তাতে এই সঙ্কট ৪৩ শতাংশ বেড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিমূল্যায়িত রুপিকে রক্ষা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ গত সপ্তাহে ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ২০১৭ সালের মে মাসে যেটা ছিল ১৬.৪ বিলিয়ন ডলার।
পাকিস্তানের প্রায় ৬০টি বড় ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে পাকিস্তান বিজনেস কাউন্সিল। এর প্রধান নির্বাহী এহসান মালিক বলেন, ‘কেউই মনে করেন না যে আইএমএফ’র কাছে যাওয়া ছাড়া ভিন্ন কোন পথ এখন খোলা আছে’।
২০১৯ সালের জুনে যে অর্থবছর শেষ হবে, তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও আইএমএফ বলছে এটা বাধাগ্রস্থ হয়ে ৪.৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বর্তমানে যে মুদ্রা সঙ্কট তৈরি হয়েছে, ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগেও একই ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। নওয়াজ শরীফের দল ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল। ক্ষমতায় বসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পিএমএল-এন আইএমএফের কাছ থেকে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা নিয়েছিল।
বিশ্লেষকরা অবশ্য অতটা আশাবাদী নন। আইএমএফের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি পাকিস্তান পূরণ করতে পারবে কি-না, সেটা নিয়ে নিশ্চিত নন তারা। অধিকাংশই সন্দেহ করছেন, দেশের এই বিশৃঙ্খল অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে চীন এখান থেকে আরও বেশি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু নতুন সরকার যদি আইএমএফের কাছ থেকে আরেকবার সহায়তা নিতে চায়, তাহলে তাদেরকে খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। ৩০৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মধ্যে ৬.৮ শতাংশ অর্থ ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে তাদের।
স্থানীয় ব্রোকারেজ টপলাইট সিকিউরিটিজের গবেষণা বিভাগের পরিচালক সাদ হাশেমি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আইএমএফ চাইবে আর্থিক ঘাটতি কমিয়ে আনতে এবং সে কারণে আগামী সরকারের জন্য তাদের নির্বাচনী বড় বড় প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করা খুবই কঠিন হবে’।
পাকিস্তানের টেক্সটাইল এবং অন্যান্য উৎপাদকরা দেখছেন তাদের প্রতিযোগিতার বাজার কমে গেছে। আমদানি বাড়লেও রফতানি বাড়েনি। ফলে ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
চার দফা রুপির অবমূল্যায়নের কারণে রফতানিকে সাময়িক সামান্য উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের বহু রফতানি বাণিজ্যই প্রতিযোগিতার বাজার হারিয়েছে। বিনিয়োগও এখন দারুণ দরকার হয়ে পড়েছে।
বিদ্যুতের দাম কমানোর জন্য বিদ্যুৎ খাতেরও পুনর্গঠন দরকার। যে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিতে রয়েছে, সেগুলো প্রাইভেট খাতে দেয়া দরকার। আর নতুন সরকারকে অবশ্যই সেটা অর্জন করতে হবে, যেটা অর্জনে আগের সবগুলো সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সেটা হলো: বিশ্বের অন্যতম নিম্নমাত্রার কর সংগ্রহকারী এই দেশের আরও মানুষকে ট্যাক্স দেয়ার জন্য রাজি করাতে হবে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ