প্রতিবাদে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করে বিক্ষোভ রাজধানীতে বেপরোয়া বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত
সুজন কৈরী: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে গতকাল দুপুরে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিম নামে এই দুই শিক্ষার্থি বাসের জন্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন মহাসড়কে অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় সময় জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসের চালক বেপরোয়া গতিতে এসে তাদের চাপা দেয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১২ জন। তাদের কুর্মিটোলাসহ বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার পর বাসটিকে আটক এবং চালক ও হেলপারকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওই কলেজের ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন আশপাশের অপেক্ষমান যাত্রী ও সাধারণ মানুষজনতা। এ সময় ইসিবি চত্বরের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করাসহ অর্ধ শতাধিক বাস ভাঙচুর করা হয়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে বিমানবন্দর সড়কে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। ছুটি শেষে বাসে ওঠার জন্য কলেজটির বেশ কিছু শিক্ষার্থী র্যাডিসন হোটেলের বিপরীতে সিএমএইচ স্টপেজে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় কালশি ফ্লাইওভার দিয়ে মিরপুর থেকে উত্তরাগামী একটি বাস ওই স্টপেজে এসে দাঁড়ালে সেটিতে শিক্ষার্থীরা উঠছিলেন। ঠিক সেই সময় যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে একই রুটের জাবালে নূরের একটি বাস দাঁড়ানো বাসটির বাম পাশ দিয়ে দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়ে এবং দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে পড়ে। এতে বাসটির চাপায় ঘটনাস্থলেই কলেজ শিক্ষার্থী মিম ও আব্দুল করিম নিহত হয়। আহত হয় আরো বেশ কয়েকজন। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পেছন থেকে আসা বাসের যাত্রী রিপন বলেন, এমন ঘটনা আর কখনো দেখিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আজাহারি শুনতে হলো। কান্নার আওয়াজ আর জটলা দেখেই বাস থেকে নেমে পড়ি। কাছে যেতেই দেখি রক্তের গঙ্গা বইছে। দৌড়ে আসে অন্য ছাত্রছাত্রীরা। দৌড়ে আসে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে সেনা কর্মকর্তা ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তিনি বলেন, আমার দেখে মনে হলো, পেছনের বাসটি সামনের বাসটিকে আটকে দিতে চেয়েছিল। দ্রুতগতিতে টার্ন নিয়ে সামনে ঢুকতেই অপেক্ষমান যাত্রীদের উপর উঠে পড়ে বাসটি।
ট্রাফিক ও ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে, র্যাডিসন ব্লু হোটেলের সামনের বিমানবন্দর সড়কে ওই দুর্ঘটনায় ১৪ জন শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। এদের মধ্যে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজীবকে গুরুতর অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত দিয়া খানম মিমের বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তাদের বাড়ি মহাখালী দক্ষিণপাড়ায়। সে একাদশ শ্রেনিতে পড়তো। অন্যদিকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিমের বাবার নাম মৃত নূর ইসলাম ও মা মহিমা বেগম। তাদের বাড়ি উত্তরা আশকোনা এলাকায়।
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ডিসি প্রবীর কুমার দাস সাংবাদিকদের বলেন, সহপাঠী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ এবং ভাঙচুর করে। এ সময় মহাখালী থেকে উত্তরা রোড়ের দুই দিকে যানজট দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকের পাশাপাশি উত্তরা ও গুলশান জোনের পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল আহাদ জানান, এ ঘটনায় বাসচালক ও তার সহকারীকে (হেলপার) আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।