প্রথম পাতা • মিনি কলাম • লিড ৩
আমাদের অর্থনীতির এক যুগে পাঠকের প্রত্যাশা
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
১। আমাদের অর্থনীতি তার পথচলার এক যুগ পূর্ণ করলো। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ভাল দিকগুলির পাশাপাশি ‘পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে ‘পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়বার পাঠক’ আশঙ্কাজনক হিসেবে কমে গেছে। ফলে বিপুল সম্ভাবনাময় অনেক কাগজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে অথবা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। ঠিক সেই সময় আমদের অর্থনীতির এক যুগ পূর্তি আমাদের প্রিন্ট মিডিয়ার একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য খবর।‘ক্ষুদ্র তেলাপোকা বাঁচে’ বিশালাকায় ম্যামথও বিলুপ্ত হয়ে যায়’। না বেঁচে থাকবার জন্য বেঁচে থাকা নয়। বরং, আমাদের অর্থনীতি বেঁচে আছে তার বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞে, সামাজিক দায়বদ্ধতায়, মাটি ও মানুষের নিবিড় সংপৃক্ততায়। এই পত্রিকার প্রাণপুরুষ ‘নাঈমুল ইসলাম খান’ তাকে এদেশের অধিকাংশ মানুষই চেনেন। তার সম্পাদনা-ছোঁয়া-স্পর্শের পত্রিকার সাথে পাঠক হিসেবে আমার সংযোগ প্রায় দুই যুগ । সত্য প্রকাশের দূরন্ত সাহসের এক সাহসী পুরুষ, স্পষ্টকথক, পাঠকের প্রাণস্পন্দন যিনি সম্যক শুনতে পান। পর্দার সামনের এবং নেপথ্যের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলেই প্রকাশ করেন। লেখালেখির সুবাদে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে পরিচিত হওয়া এবং আলাপচারিতার সৌভাগ্য হয়। ব্যক্তিজীবনে তিনি সদা হাস্যময়, বিপুল প্রাণরসে জারিত, মেধাদীপ্ত, প্রজ্ঞাবান মানুষ। সঙ্গত কারণেই এমন ব্যক্তিত্বের মানসপুত্র দৈনিক কাগজ ‘আমাদের অর্থনীতি ‘ সময়ের দাবিটি বুঝতে পেরেছে এবং সেই পথেই হাঁটছে বলেই আমার বিশ্বাস ।
২। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশে পাঠক ২৪ ঘণ্টাই দেশ বিদেশের ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে তার সংপৃক্ত থাকতে পারছে। মণি কাঞ্চন হিসেবে যুক্ত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। এর ব্যবহার নিয়ে দেশে-বিদেশে নানামুখী প্রশ্ন থাকলেও আজকের দিনে এই মাধ্যমকেও আর উপেক্ষা করবার দরকার বা অবস্থা কোনোটাই নেই। এই সবগুলি মাধ্যমই সংবাদপিয়াসু পাঠককে হালনাগাদ রাখছে। ফলে পাঠক হচ্ছে সমৃদ্ধ, বহু চোখ সংবলিত স্থিতধী, অধিকতর সচেতন, রুচিশীল, পরিশীলিত ।
৩।আয়নায় আমরা মুখ দেখি। পত্রিকাকেও সমাজের দর্পণ বলা হয়। পাঠক হিসেবে আমি নিশ্চিত এই পত্রিকার সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ নীহারিকাবাসী নন। তারা ভ’ূমিপুত্র, এই মাটিরই সন্তান। অর্থনীতি বিষয়টি বিশাল এবং ব্যাপক। এর মুকুরেই ধরা পরে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামো, রাজনৈতিক মনন, বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির অবয়ব বিনির্মাণেও থাকে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব। পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চাকা রাজধানীতে থাকলেও ৬৪ হাজার পল্লীতেই এর শিকড় প্রোথিত। সামনেই নির্বাচন সঙ্গত কারণেই একে ঘিরে মানুষের উৎসাহ, উদ্দীপনার যে আমেজ তৈরি হয়েছে সামনের দিনে সেটি আরো বেগবান হবে । অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে ।
৪। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে ‘জঙ্গিবাদ’ নামে পুরনো দৈত্য নতুন করে আবির্ভূত হয়েছে। আপাতভাবে বিষয়টি রাজনৈতিক সমস্যা মনে হলেও সমকালীন অনেক ঘটনা, বিশেষ করে হোলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের ভীত এবং সচকিত করে। নিঃসন্দেহে এই ঘটনার প্রভাব আমাদের অর্থনীতির উপর অনেকটাই পড়বে। এমন ধরনের ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, এই অপশক্তির দেশি-বিদেশি নেপথ্য নায়কদের মুখোস উন্মোচন ও দেশ এবং জাতির জন্য বিশেষ সময়োপযোগী কাজ। পাঠক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা ‘আমাদের অর্থনীতি ‘ সেই কাজটিও সুচারুরূপে করবে ।
৫। সম্প্রতি সময়ে মাদকের করাল থাবায় ছিন্নভিন্ন অনেক পরিবারের আর্তনাদ আমাদের কানে এসেছে। এই মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বারংবার ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা জানতে পারলাম বস্তিবাসী বা হত দরিদ্ররা মাদক পাচারে ব্যবহৃত হলেও এদের লালন-পালনকারী মাফিয়াদের ব্যাপ্তি অনেক প্রশস্ত। দেশের প্রতি দায়বদ্ধ এই পত্রিকাটি সেই অন্ধকারের শক্তির মুখোস উন্মোচন করবে সেই প্রত্যাশা সবারই ।
৬। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের ইতিহাস মাত্র তিন দশক। কিন্তু, দেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক বুনিয়াদের উপর দাঁড় করানোর জন্য এই শিল্পের অপার ভূমিকা। শুধু গার্মেন্টস দ্রব্যাদি রপ্তানির মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা অর্জনই নয়, লক্ষ লক্ষ মহিলাসহ অনেক পরিবারের রুটিরুজির সংস্থান করে দিয়েছে এই মাধ্যম। তাই এই শিল্পকে আরো বিকাশ সাধন করতে আর যেন নতুন করে কোনো ‘রানা প্লাজা’ সৃষ্টি না হয় সেই দূরদর্শী চোখ দিয়ে পত্রিকাটি আমাদের আলোকিত করবে, আগাম বার্তা দিবে পাঠক হিসেবে সেই আশাবাদ রইলো ।
৭। মানুষ বিপদের শেষ অবলম্বনের জন্য সঞ্চয় করে। সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে মূলত ব্যাংককেই বেছে নেয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ ভ্রমরাই তার ব্যাংকিং খাত। সময়কালে এই খাতে বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের চিন্তিত করেছে। যে পত্রিকার নামেই পরিচয় পাওয়া যায় এটি ‘আমাদের অর্থনীতি’। তাই আমাদের অর্থ দ্বারা কেঊ যদি অনর্থ করবার চেষ্টা করে তার স্বরূপ এই পত্রিকা আমাদের চিনিয়ে দেবে এটিই আশাবাদ।
৮। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ জীবন পরিক্রমণ শেষে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে স্থিতপ্রজ্ঞা কলমে তার সারা জীবনের কর্মযজ্ঞের আত্মমূল্যায়ন লেখেন ‘ঐকতান’ কবিতায়। সেখানে তার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে লেখেন ‘
‘চাষি খেতে চালাইছে হাল,
তাঁতি বসে তাঁত বুনে, জেলে ফেলে জাল
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার’
বাংলাদেশ নামক এই সংসারের, এই জনপদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি তার চাষি, তাঁতি, জেলে, নানা শ্রেণীর কর্মজীবী মানুষ। নিরপেক্ষ নয়, এই পত্রিকা শ্রমজীবী মানুষেরই পক্ষ নিয়ে এসেছে, নিচ্ছে এবং আগামী দিনেও নিবে পাঠক হিসেবে এই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: উপ অধিনায়ক, আর্মড ফোর্সেস ফুড অ্যান্ড ড্রাগস ল্যাবরেটরী