অটিজম আন্দোলন এবং একজন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন
অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত
অটিজম বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অটিজম স্পীক্স এর সহায়তায় ‘ঈড়হভবৎবহপব ড়হ অঁঃরংস ঝঢ়বপঃৎঁস উরংড়ৎফবৎ ্ উবাবষড়ঢ়সবহঃধষ উরংধনরষরঃরবং রহ ইধহমষধফবংয ্ ঝড়ঁঃয অংরধ” যেখানে ১৪টি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব যার মধ্যে ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের চেয়ার মিসেস সোনিয়া গান্ধী এবং শ্রীলঙ্কান ফাস্ট লেডী, মালদ্বীপের উপ রাষ্ট্রপতির পতœী। এই কংগ্রেস ও সফলতা এসেছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানের জন্য এবং সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য। এই কংগ্রেস ওই ধরনের বিশেষ শিশুদের মা-বাবা এবং নিকট আত্মীয়দের মনে ৪.৫ থেকে ৫.৫ রিকটার স্কেলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে অর্থাৎ প্রচ-ভাবে সচেতন হয়ে উঠেন এবং বুঝতে পারেন এটা কোনো রোগ-ব্যাধি নয়, এদেরকে শিকল দিয়ে বেধে না রেখে অথবা লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার সময় হয়েছে। তাদেরও সমাজে অনেক কিছু দেওয়ার সামর্থ্য আছে, যদি সুযোগ দেওয়া হয়। এখান থেকেই স্বাক্ষরিত হয় “উযধশধ উবপষধৎধঃরড়হ” অর্থাৎ ‘ঢাকা ঘোষণা’।
২০১৪ সালের নভেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভানেতৃত্বে এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চেন এর উপস্থিতিতে ঝঊঅজঙ এর ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে একদিনের কর্মসালা ও ২টি ঝরফব ঊাবহঃ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের এ.এস.ডি. শিশুদের জন্য কর্মসূচি অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলতে থাকে। যার কৃতিত্ব এবং কর্তৃত্ব বর্তমান সূচনা ফাউ-েশনের চেয়ারপার্সন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সায়েমা ওয়াজেদ হোসেন। যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চ্যাম্পিয়ন অব দ্য পাবলিক হেলথ। ডঐঙ/ঝঊঅজঙ জবংড়ষঁঃরড়হ ঘড়: ঝঊঅ জপ ৬৫/জ৮ ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর পাস হয় নি¤েœাক্ত শিরোনামে ‘ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব ধহফ পড়-ড়ৎফরহধঃবফ বভভড়ৎঃং ভড়ৎ ঃযব সধহধমবসবহঃ ড়ভ অঁঃরংস ঝঢ়বপঃৎঁস উরংড়ৎফবৎং ্ উবাবষড়ঢ়সবহঃধষ উরংধনরষরঃরবং’ এখানে উল্লেখ্য অটিজম আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী সায়েমা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের ভূমিকা স্বার্থক রূপ লাভ করে ১২-১২-১২-১২ তে অর্থাৎ ১২ই ডিসেম্বর ২০১২ সালের জাতিসংঘ সময় ১২টা ১২ মি. বাংলাদেশে কর্তৃক উত্থাপিত অটিজম বিষয়ক প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে। আবারও বাংলাদেশ এবং সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। ২৪ মে, ২০১৪ সাল সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের নেতৃত্বে এবং বাংলাদেশের প্রস্তাবনায় এবং ৫০টি দেশের সহ প্রস্তাবনাতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১২ সালের প্রস্তাবটি পাস করেন। আরও একটি অগ্রগতি লাভ হয় গ্লোবাল অটিজমকে দেওয়া হয় এডভোকেসীর (ওকলাতির) কাজ।
এখানে জেনে রাখা ভালো এই সব ঐশ্বরিক শিশুগুলোকে যদি স্বাভাবিক শিশুদের মতো ভালবাসা দিয়ে, যতœ দিয়ে লালন করা হয় তাহলে তারাও অন্যান্য সুস্থ শিশুদের মতো হতে পারে। শুধু মাত্র দরকার গোটা সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও আন্তরিক চেষ্টা। প্রতিবন্ধীরা একজন নাগরিক। সুস্থ ব্যক্তির মতো প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সমমর্যাদাও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকাও বসবাসের অধিকার রয়েছে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ টঘঈজচউ ঘোষণা করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধীদের অধিকার সনদে স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা নিমিত্তে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষাট্রাস্ট আইন, ২০১৩’ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ও উন্নয়ন ও কল্যাণে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়াও ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষাট্রাস্ট এর বিধিমালা, ২০১৪’ ও ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা বিধি মালা, ২০১৪’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ সকল আইন ও বিধি মালা প্রণয়নে সমাজসেবা অধিদফতর মূখ্য ভুমিকা পালন করছে।
‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩’ এর ১৩ নং ধারা মোতাবেক ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টি বোর্ড’ গঠন করা হয়েছে, যা সরকারের শিশু বান্ধব এবং নাগরিক কল্যাণ ও কল্যাণকর রাষ্টপ্রতিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ। জানি না, ভবিষ্যতে অটিজম আন্দোলনের এই ইতিহাস এদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করবে কি না?
লেখক : সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববদ্যালয়