কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বর্তমান সরকার
ফরিদুন্নাহার লাইলী : স্বাধীনতার ৪৭ বছর। তিরিশ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পেরিয়ে দেশ আজ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। নানা চড়াই-উৎরাই আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য বাংলাদেশ। জাতির প্রত্যাশার সঙ্গে সব ক্ষেত্রে প্রাপ্তির পরিপূর্ণতা না পেলেও অর্জন, উৎপাদন আর সক্ষমতায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াটাও রীতিমতো এক বিস্ময়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে কৃষি থেকে। যুদ্ধে ধ্বংস এবং তার গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গিয়েছিলেন কৃষকের কাছে। বেশ কতগুলো জটিল আইন সংস্কার করে প্রথম অবস্থা থেকেই আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় করণের নীতি ঘোষণা উপলক্ষে বেতার- টেলিভিশনে ভাষণকালে কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের সমাজে চাষিরা হলো সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণি এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পিছনে নিয়োজিত করতে হবে।’ (বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অর্থনীতি/মো. শাহাদাৎ হোসেন)
জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সব পর্যায়েই কৃষি নির্ভর জীবন ব্যবস্থাকে প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছেন। চিন্তা ও দর্শনের মধ্যে চিরকালই তিনি লালন করেছেন বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু গ্রামের কৃষক- ক্ষেতমজুর-শ্রমজীবী মানুষকে। তিনি বিশ্বাস করতেন গ্রামভিত্তিক বাংলার উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। যার ফলে, দেশে কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় এসেছে এক বেপ্লবিক পরিবর্তন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিনগুণ।
বিশ্বের যে গুটিকয়েক দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। যে দেশটি ছিল দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গার দেশ সে দেশ খাদ্যে এখন আর পরনির্ভর নয়। ব্রিটিশ আমলে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে অবিভক্ত বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায়। স্বাধীনতার পরও দুর্ভিক্ষের ধকল সইতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
সেই দেশ ইতিমধ্যে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। শুধু ধান নয়, গম, ভুট্টা, আলুসহ প্রায় প্রতিটি খাদ্যশস্য উৎপাদনেই রেকর্ড করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ফল ও মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হার বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছে। কৃষিবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও সময়োপযোগী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করায় দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
লেখক: কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সাবেক সংসদ সদস্য।