বাংলাদেশে প্রতিবাদের জায়গাটা অনেক দুর্বল হয়ে গেছে
ড. অজয় রায় : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের ব্যাপারে সরকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এটা সরকারের দুর্বলতা। আওয়ামী লীগ নিজেকে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে পরিচয় দেয়। অসাম্প্রদায়িক হলে তাদের সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ বা সরকারের অনেকেই ব্যবসায়ী। ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে তারা এত ব্যতিব্যস্ত থাকে যে, এসব দিকে তাদের কোনো নজর নেই।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, প্রতিবাদের জায়গাটা অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। বামপন্থী দলগুলো ছোট হলেও তারা তো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধে মিটিং-মিছিল, সমাবেশ করতে পারে। এতে জনগণ সচেতন হতে পারে। কিন্তু তারা অত্যন্ত দুর্বল। কোনো কর্মতৎপরতা নেই। আমার মনে হয়, তারই সুযোগ নিচ্ছে সরকার।
মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়ে যদি একেকজন একেকরকমভাবে কাজ করেন, তাহলে কীভাবে হবে। এ বিষয়ে যদি কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে তা রাজনৈতিকভাবেই দূর করতে হবে। অসম্প্রাদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব সেটা করা। তাদের সব সময়ই মনে রাখা উচিত যে, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রব্যবস্থায়ই আমাদের কায়েম করা উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্যই আমাদের যাবতীয় কর্মকা- পরিচালিত হওয়া উচিত। সবার মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র নয়, মুসলিম জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে আশি বা তার বেশি মুসলিম, অন্যরা হিন্দুসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষ। আবহমান কাল ধরে সবাই মিলেমিশে এখানে বসবাস করছি। সবাই জানে। তবু দুষ্কৃতিকারীরা সুযোগ গ্রহণ করে। এটা সরকার, আইনশৃঙ্খলরক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা। তাদের শক্তহাতে দমন করা এমন বড় কিছু নয়। এখানে সরকার, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দল ও ছাত্র সংগঠনÑ সবাই যদি এ বিষয়ে মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে এ সমস্যা দূর করা কোনো ব্যাপার নয়।
একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো ইন্টারেস্টেড মহল করে থাকে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন জানেÑ কে বা কারা এসব হামলা করে। তাদের ধরে আচ্ছামতো বেদম প্রহার করলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এ কাজটা করে না সরকার। এটা সরকারের ব্যর্থতা বলেই মনে করি।
এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে বেশকিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো হামলা, অত্যাচার-নিপীড়নের ভয়ে যদি হিন্দুরা পালিয়ে যায় তাহলে তাদের সম্পত্তি আত্মসাত করা যাবে। এসব তো নতুন কিছু নয়। এ ধরনের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা যেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে না ঘটে এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ