বাসচাপায় শিক্ষার্থী মৃত্যুর প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভে অচল নগরী
মাসুদ আলম: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে ফার্মগেট, বিমানবন্দর, মিরপুর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা, মতিঝিল ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় ২০টি গাড়ি ভাংচুর ও কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পুরো ঢাকা প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে।
পুলিশ শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি স্থানে লাঠিচার্জ করে। এসব ঘটনায় ১০-১২ জন আহত হয়। বেপরোয়া চালকের সার্বোচ্চ শাস্তিসহ ৯ দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বিকেলের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।
গত দুদিনের বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার সকালে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স’ নামের একটি ফেইসবুক গ্রুপ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক অবরোধের আহ্বান জানায়। অবরোধের কারণে চরম দুভোর্গে পড়তে হয়েছে অফিসগামী ও সাধারণ যাত্রীদের। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেটে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অবস্থান নেয়। পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে ছিল সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, সকাল ১০টায় কমার্স কলেজসহ আশপাশের বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বরের রাস্তায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ওই পথে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। একই সময় ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট সড়ক অবরোধ করে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ, নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক পরিবহন জাবালে নূরের চালকদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি দাবি করে শিক্ষার্থীরা। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে দুপুরে সায়েন্স ল্যাবরটরি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ঢাকা সিটি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় হিমাচল পরিবহনের একটি বাস ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এনা ও বুশরা পরিবহনের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ৬টি বাস ও একটি পিকআপ ভ্যান ভাংচুর করা হয়। পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়।
এছাড়া শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধনের উদ্দেশে বিমানবন্দর সড়কের হোটেল র্যাডিসনের সামনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে বিমানবন্দর সড়ক, উত্তরা, গুলশান-বনানীতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। মেরুল বাড্ডা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা হাতিরঝিল সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে এবং নাবিস্কো মোড়ে সড়ক অবরোধ করে সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। দুপুরে মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। শান্তিনগরেও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, গত রোববার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ২ শির্ক্ষ্থাী দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজিব নিহত হয়। সম্পাদনা: মোহাম্মদ রকিব হোসেন