দুঃখ যে জিয়ার বিচার করতে পারলাম না: প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমানের পরিণতি অবধারিত ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে তিনি বলেন, জিয়ার যে পরিণতি হয়েছিলÑ তা তার অবধারিত। তবে, আমার দুঃখ একটাই তার (জিয়াউর রহমানের) বিচারটা আমি করতে পারলাম না। তার আগেই সে মরে গেলো।
শোকের মাস উপলক্ষে কৃষক লীগের রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আগস্ট মাসব্যাপি রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান এই হত্যার সঙ্গে সম্পূর্ণ জড়িত ছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকুরি দিয়ে পুরষ্কৃত করে। আমাকে আর রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি। রেহানার পাসপোর্ট আটকে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা হয়েছিল।
বিবিসি’কে দেওয়া খুনি কর্নেল রশিদের সাক্ষাতকারের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইন্টারভিউতে বলেছিলÑ তারাই জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। কেন হত্যা করেছিল প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেছিলÑ বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা কমানোর বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তার পাহাড় সমান জনপ্রিয়তা কোনোক্রমেই কমানো যায়নি। কাজেই ওদের হত্যা ছাড়া নাকি আর কোন পথ তাদের ছিল না। তারা এটাও বলেÑ তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সম্পর্ক ছিল। তারা জিয়াউর রহমানকে জানিয়েছিল এবং জিয়াউর রহমান এগিয়ে যাও বলে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল। সে বলেছিলÑ আমরা সবাই তোমাদের সঙ্গে আছি।
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিধ্বস্ত অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত হয়েছিল। গৃহহারা মানুষকে ঘরবাড়ি করে দিয়েছিলেন। ইউনিয়নে ইউনিয়নে হাসপাতাল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন দেশটি কেবল উঠে দাঁড়াচ্ছিল, মানুষ শান্তির মুখ দেখছিল, তখনই আঘাতটি এলো।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, কী দুর্ভাগ্য আমাদের! অতি পরিচিত জনÑ খুনি রশিদ, ফারুক, ডালিম, নূর। এরা কারা? এদের তো প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিল। ডালিম, তার শাশুড়ি, বউ, শালিতো দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকতো। মুক্তিযুদ্ধে যখন জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হলোÑ তখন কামালকে এডিসির দায়িত্ব দেওয়া হলো। নূরকেও এডিসির দায়িত্ব দেওয়া হলো। তারা দু’জন কর্নেল ওসামানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। সেই নূর নিজেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের সময় উপস্থিত ছিল। খুনি মোস্তাক আমাদের দলেরই একজন ছিল, কিন্তু সে বেইমানি করলো, মুনাফেকি করলো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিরাও একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। কিন্তু যে বাংলার মানুষের ওপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিলÑ তিনি ভাবতে পারেননি, এই বাংলার মাটিতে কেউ তাকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু সেই বাংলার মাটিতে বিশ্বাসঘাতকের দল তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার করতে গিয়ে অনেক হুমকি, অনেক ধমকি, অনেক কিছুই আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। বাংলাদেশের কথা বললে বঙ্গবন্ধু চলে আসে, এজন্য সেই নাম সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার চেষ্টাÑ ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো যাবে না, কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমার ওপর বার বার আঘাত এসেছে। আবারও হয়তো আসবে, কিন্তু সেগুলো আমি পরোয়া করি না। মৃত্যুকে আমি কখনও পরোয়া করি না। এটুকু শুধু মনে করিÑ আমি বেঁচে তো আছি, বাবার অধরা কাজগুলো সম্পন্ন করতে।
সবার কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এই গতি যেন থেমে না যায়। আমরা যেন এগিয়ে যাওয়ার এই গতি ধরে রেখে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন।