আন্দোলনে ঢাবি কেন্দ্রীক সংগঠনের সম্পৃক্ততা
তরিকুল ইসলাম সুমন: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চম দিনেও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শ্লোগনকে সামনে রেখে রাস্তায় আন্দোলন করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর শাহবাগ রাস্তায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের গতকাল ‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন’ কমিটির পরবর্তী কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর কথা থাকলেও তা না জানিয়ে আর একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে বীর শ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষার্থী মো. হাসিব। ছাত্রীদের পক্ষে কাজ করছেন ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার। গতকাল বেলা ৫টার সময়ে অন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন মূলতবি করে আজ সকাল ১১টায় আবারো জমায়েত হওয়ার কথা জানান তারা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ একাত্বতা ঘোষণা করেছে। একাত্বতা ঘোষণাও করেছে গণসংহতি আন্দোলন, বিএনপিসহ বিভিন্ন অভিনয় শিল্পীরাও একাত্বতা ঘোষণা করেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থালের আশ পাশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীদেরও দেখা দেখা গেলেও কাউকে শিক্ষার্থীদের মাঝে বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি।
আমাদের অর্থনীতির অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রোববার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পর গত সোমবার থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন একাত্ততা প্রকাশ করে। পাশাপাশি তারা এই আন্দোলনকে দীর্ঘ করতে সংগঠিত হতে থাকে। গত মঙ্গলবার থেকে ছাত্রলীগ ছাড়া প্রায় সবগুলো ছাত্র সংগঠন পৃথকভাবে রাজধানীর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছোট ছোট কমিটি গঠন করে। নেপথ্যে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা আন্দোলনের ইন্ধন দেয় এবং দাবি-দাওয়াগুলো ড্রাফট করে। গতকাল শাহবাগে ঢাবির বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রদের সরাসরি আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী জানান, শিক্ষার্থীরা ন্যায় বিচার চাচ্ছে। এটা অধিকার। আমরাও চাই দোষীরা শাস্তি পাক। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক। একারণেই শিক্ষর্থীদের সঙ্গে আমরা একাত্ততা ঘোষণা করেছি।
গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বক জোনায়েদ শাকি বলেন, ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার সবাইর আছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আমরা সমর্থন করি। একারণে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়েছি।
এর আগে মঙ্গলবার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি কমিটি গঠন করে এর মুখপাত্র করা হয়েছিল ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শেখ শাফীকে। কিন্তু গতকাল কোথাও এই কমিটির এই মুখপাত্রের দেখা মিলেনি।
বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, দাবি আদায়ে ৯ দফা দাবি আদায়ে বিভিন্নভাবে কাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এর মধ্যে ৯ দফা দাবি সংবলিত লিফলেট বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে এ লিফলেটের হুবহু মিল রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ১. বেপোরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে, ২. নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, ৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে, ৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে, ৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে, ৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে, ৭. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ৮. রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে, ৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।