মনীষার গল্প হেরেও তিনি হিরো
বরিশাল প্রতিনিধি: সদ্যসমাপ্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মেয়র প্রার্থী হয়ে মই প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী। বড় ব্যবধানেই তিনি হেরেছেন। তবে হেরেও তিনি হিরো হয়েছেন।
বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি একেবারেই তার বিপরীতে একজন মানবদরদী ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াকু চরিত্রের কারণে মনীষা চক্রবর্তী অসংখ্য মানুষের মনিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। গত ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারসহ বাকি ছয়জন মেয়রপ্রার্থীই সেখানে জামানত হারিয়েছেন। মনীষা চক্রবর্তীসহ একাধিক প্রার্থী ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটগ্রহণের দিন দুপুরে নির্বাচন বর্জন করেছেন। ভোটকেন্দ্রে শারীরিক লাঞ্ছিত হওয়ার পরেও নারীনেত্রী মনিষা চক্রবর্তী ১ হাজার ৯১৭ ভোট পেয়েছেন।
মনীষা চক্রবর্তী একজন চিকিৎসক। তবে চিকিৎসাকে তিনি পেশা নয় সেবা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও মনীষা চক্রবর্তী সরকারি চাকরিতে যাননি। বরিশালের বস্তিবাসী খেটে খাওয়া মানুষদের চিকিৎসা সেবায় তিনি নিবেদিত। শ্রমিকসহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও তিনি অগ্রগামী। এজন্য তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে। নির্বাচনে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন সেই সব মানুষের ওপর নির্ভর করে। মাটির ব্যাংকে টাকা জমিয়ে সাধারণ মানুষ তার নির্বাচনী খরচ জুগিয়েছিলেন।
মনীষা চক্রবর্তী গত এপ্রিল মাসে প্রথমে দেশবাসীর নজরে আসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বরিশাল শহরের একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। একজন লড়াকু নারীকে গ্রেফতারের জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশ ঘিরে ধরেছে। আর তার চারপাশে মানবঢাল হয়ে আছে বেশ কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষ। পুলিশ তাদের সমানে পেটাচ্ছে। ঘটনাটি ছিল, বরিশাল শহর থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদ করা হচ্ছিলো। উচ্ছেদ ঠেকাতে রাস্তায় মিছিল বের করেন চালকরা। তাদের রুটি রুজির সংগ্রামে সামনের কাতারে ছিলেন মনীষা চক্রবর্তী। ওই আন্দোলন থেকে গ্রেফতার হবার পর মনীষা চক্রবর্তীর মুক্তির দাবিতে ফেসবুকে অসংখ্য মানুষ সোচ্চার হন। সেই মনীষাই যখন মেয়র পদে দাঁড়ালেন তখন তার পক্ষে যে দেশজুড়ে অজ¯্র মানুষের ভালোবাসা থাকবে সেটা বলাইবাহুল্য।
মনীষা চক্রবর্তীর দাদা মুক্তিযুদ্ধে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি (মনীষা) সরকারি চাকরির সুবিধা গ্রহণ না করে দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে বেছে নিয়েছেন সমাজবাদী রাজনীতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা বিরল ঘটনা। গরিবের ডাক্তার নামে বরিশালে তাকে সবাই চেনেন। বিশেষ করে নি¤œবিত্ত মানুষের কাছে মনীষা চক্রবর্তী ‘গরিব মানুষের বন্ধু’। আর তাই তার কাছে যেকোনো সময় যাওয়া যায়। প্রয়োজনে পাশে পাওয়া যায়। তিনি সবার জন্যই কাজ করেন।
¯্রােতের বিপরীতে চলা এমন দরদি নেতা যে শুধু বরিশালে নয়, সারাদেশের মানুষের মণিকোঠায় ঠাঁই নেবেন সেটাই স্বাভাবিক। নির্বাচনে তার হেরে যাওয়ার পর প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মনীষা বাসদের পতাকা নিয়ে রাজনীতির মাঠ চষবেন, কিছু মানুষের বাহবা পাবেন কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিততে পারবেন না। মনীষাকে নিয়ে যারা এখন উচ্ছ্বাস ও আবেগে ভাসছেন তারাও তার রাজনীতির পক্ষে দাঁড়াবেন না। আমরা সৎ মানুষের রাজনীতি চাই আর জেনে-বুঝেও অসৎ মানুষদের ভোট দেই। সম্পাদনা :মুরাদ হাসান