কৃষি বীমাই পারে কৃষকদের বাঁচাতে
ওয়াহিদুজ্জামান: ভালো নেই দেশের কৃষক। বন্যা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগে হাঁপিয়ে উঠেছেন তারা। তাছাড়াও কৃষি শ্রমিকের অভাব, সার বীজ উৎপাদন উপকরনের মূল্য বৃদ্ধি, উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে উৎপাদনের ব্যয় ঘরে তুলতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষকদের এই করুণ অবস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এই মহা সংকট থেকে উত্তোরনের জন্য তারা কৃষি বীমার কথা বলছেন।
জানামতে, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবস্থা ৩৫ ভাগ। এমনি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব না দেওয়ার কোন উপায় নেই। তারপরও বাংলাদেশের কৃষিখাত চরম ভাবে অবহেলিত। এখনও দেশের কৃষকদেরকে পুরোপুরি ভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বসে থাকতে হয়। প্রকৃতি তাদের “মারবে না হয় বাঁচাবে” সেই বিশ্বাসেই তারা উৎপাদন কাজ পরিচালনা করে থাকে। অথচ এই অসহায় কৃষক সমাজ প্রকৃতির হাতে বার বার মার খাচ্ছে কিন্তু তাদের রক্ষায় রাষ্ট্র বা সরকার কেউ এগিয়ে আসছে না। বরং কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা কৃষি উৎপাদনে বিনিয়োগ করার পর প্রাকৃতিক দূর্যোগে পরে, যখন তারা ঠিকমত টাকা পরিশোধ করতে না পারে, তখন মামলা-হামলার শিকার হয়। এরকম হাজার হাজার মামলা বর্তমানে কৃষকদের উপর ঝুলছে।
কৃষকদের এই দূর্ভোগ থেকে রক্ষায় বাংলাদেশে নামে মাত্র কিছু বিমা কোম্পানী কৃষি বীমা চালু করেছে বলে শুনা যাচ্ছে। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন সহ বিভিন্ন দেশে কৃষি বীমার ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। এমনিকি সম্প্রতি শ্রীলংকার সরকার আইন করে আর্থিক সংস্থা যেমন-ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানির বাৎসরিক মুনাফার উপর নির্ধারীত কর্পোরেট ট্যাক্সে অতিরিক্ত ২ ভাগ লেভী বাধ্যতামূলক করেছে। এই অতিরিক্ত টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা না হয়ে সরাসরি কৃষি বীমা ফান্ডে জমা হচ্ছে। মোটা অংকের এই ফান্ড থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লেভী অর্জন হচ্ছে এবং শ্রীলংকা সরকার সেই টাকায় কৃষকদের জন্য কৃষি বীমার ব্যবস্থা করেছে। এখন আর সেই দেশের সরকারকে এই খাতে ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশে এই কৃষি বীমার ব্যাপক প্রসার নিয়ে আমার দৈনিক আমাদের অর্থনীতির পক্ষ থেকে কথা বলেছিলাম, দেশের সেরা বীমা ব্যক্তীত্ব, বেসরকারী পর্যায়ে বীমা উন্নয়নে সফল প্রতিষ্ঠান বিআইপিডি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মোরতুজা আলীর সাথে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি বীমার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে- বাংলাদেশের অর্থনীতি বাঁচবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও সরকারকে দেশের কৃষকদের রক্ষায় ব্যাপক হারে কৃষিবীমা চালু করা উচিত। এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলংকার মডেল আমারা গ্রহণ করতে পারি। বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ এর সিইও আহমেদ সাইফউদ্দিন চৌধুরীর সাথে এ নিয়ে কথা বললে, তিনি জানান, কৃষি বীমা নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এ বিষয়ে একটি প্রজেক্ট চালু করে কিছু কিছু কাজ করছে। বিভিন্ন জায়গায় আবহাওয়া পরিমাপ ব্যবস্থা না থাকায় আপাদত ব্যপক প্রসার সম্ভব হচ্ছে না। আমিও মনে করি, দেশের প্রয়োজনে কৃষি বীমার ব্যাপক প্রসার জরুরি। হয়ত খুব শীঘ্রই আমরা তার বাস্তবায়ন দেখতে পাব।