অজয় দাশগুপ্ত : আসামে নাই হয়ে যাওয়া বাঙালিদের নিয়ে বাংলাদেশের চিন্তার কিছু নাই। কথাটা বলেছেন হর্ষবর্ধন বাবু। তিনি আমাদের দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত। তিনি এও বলেছেন এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কথা সত্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাঙালি বলে আমাদের কিছু দায় থাকে। বিশেষত সীমানা যখন লাগোয়া। এই লাগোয়া সীমানার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত কতবার যে সমস্যার কারণ হয়েছে সেটা আমাদের সবার জানা। হর্ষবর্ধন বাবু যতই বলুন আমরা ভালো জানি এই সমস্যার আঁচ আমাদের গায়ে সে লাগবে। কারণ আমরাও বাঙালি।
এই সমস্যার কারণ যাই হোক এখন এটি একধরণের সাম্প্রদায়িক রুপ ধারণ করেছে। সমাজিক মিডিয়ায় দেখছি কেউ কেউ একে হিন্দু মুসলিম এইভাবে দেখতে চাচ্ছেন। এতে যেসব হিন্দুরা খুশী হচ্ছেন বা হতে চান তাদের মনে বাংলাদেশের চিত্রটিও যেন জাগরুক থাকে। আমাদের সমাজে সাম্প্রদায়িক দাঙা বা ফ্যাসাদ লাগানো লোকের অভাব নাই। একধরণের রাজনীতি তা নিয়েই বেঁচে আছে। তারা আপাতত চুপ থাকলেও এঘটনার সমাধান না হলে এটা নিয়ে খেলবে। আর সে খেলায় লাভ হবে প্রতিক্রিয়াশীলদের। আসামে যে সমস্যা বা যে খেদাও আন্দোলন তা দীর্ঘকালের । এক সময় বাঙালি পেলেই খেদাও বা মারো এমন নীতি কিছুটা লাঘব হলেও এখন বিজেপি বা সংশ্লিষ্টদের চাপে তা আরেক রুপ ধারণ করেছে।
মানুষ তো মানুষ । সে যেখানে জন্মায় বা যে সমাজ বাঁচে যে দেশে বড় হয় সেটাই তার দেশ। এটা তার এখতিয়ার ভুক্ত না। ঈশ্বর কিংবা প্রকৃতি তা নির্ধারণ করে দেয়। সে মানুষকে রাজনীতি কতভাবেই না প্রতারণা করে। একদা উপমহাদেশের জাতিগত দাঙ্গা আর দেশান্তরী হবার কাহিনী এখনো আমাদের ছেড়ে কথা বলেনা। সে সময়ও যে দুটো জাতিসত্তা সবচেয়ে বেশী ভুগেছিল তাদের একটি পাঞ্জাবী আর একটি বাঙালি। আজ সত্তর বছর পর ভারতের মত গণতান্ত্রিক দেশের রাজ্য অসমে আবার একশ্রেণীর বাঙালির ওপর আঘাত নেমে আসছে। জানিনা ভারতের বুদ্ধিবৃত্তি এ নিয়ে সোচ্চার হবেন কি না। আমাদের দিক থেকে সাবধানতার বিকল্প নাই। আমাদের দেশে এর বদ আছর বা কু নজর যেন না পড়ে। আমাদের সমাজে এমনিতেই সমস্যার অন্ত নাই। তার ওপর যদি আসামের সমস্যা এসে চাপেতো দূর্ভোগের অন্ত থাকবেনা। কাকে কি বলি? এই আসামে জন্মেছিলেন ভূপেন হাজারিকা। এক অনন্য অসাধারণ শিল্পী। যিনি গানে মানুষকে জাগিয়ে তুলতেন। যাঁর গান মানেই মানুষের জয়জয়াকার। সেই তিনিও শেষ বয়সে বিজেপিতে মজেছিলেন। তবু আশা রাখি তাঁর গানে যেমন মানুষ মানুষের জন্য তেমন করে আসামের বাঙালিদের দেখভাল করা হবে।
না হলে এর আঁচ বাংলাদেশেও পড়তে পারে। যার অশুভ প্রভাবে আমরা ভুগবো। ভুগবে উপমহাদেশ। আশাকরি আসামের বাঙালির দিকটা মানবিক ভাবে বিবেচনা করে উপমহাদেশে নতুন কোন রোহিঙ্গা সমস্যার দুয়ার খোলা হবেনা।