পাহাড় ধস রোধে কর্মসূচি গ্রহণ ও মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসহ ১০ দফা সুপারিশ
সোহেল রহমান: পাহাড় ধস রোধে পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় কাটা, পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ ও বনায়ন বন্ধ করা এবং এ লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ‘পাহাড় রক্ষা কর্মসূচী’ গ্রহণসহ ১০ দফা সুপারিশ করেছে ‘পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধান ও পরিবেশগত সমীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বিক সমীক্ষার উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটি’। একইসঙ্গে তিন পার্বত্য জেলায় মহাসড়ক/সড়ক নির্মাণ, সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে কমিটি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এসব সুপারিশমালা নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাহাড় সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলার পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে জনবসতি নিষিদ্ধ ঘোষণা ও এসব স্থানে বিদ্যমান সকল বসতি এবং পাহাড় সংশ্লিষ্ট সড়ক, নদী ও চূড়ার মধ্যবর্তী ঢালু খাঁজের সকল বসতি জরুরী ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
সূত্র জানায়, ধস রোধে পাহাড়ের ঢাল রক্ষাপ্রদ দেয়াল স্থাপন এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য পাহাড়ের ঢালের পানি গড়িয়ে নেমে ড্রেন দিয়ে যাতে পাহাড়ী ছড়াতে প্রবাহিত হতে পারে সেজন্য প্রণীতব্য মহাপরিকল্পনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি অন্তর্র্ভূক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিটি। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের পাহাড়ী এলাকার সড়ক নির্মাণের কৌশলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে বলে কমিটি মনে করে।
অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সড়ক, সড়ক সংশ্লিষ্ট পাহাড়ী ঢাল ও ড্রেন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা; পাহাড়ী খাড়া বাঁকগুলোর উপর অবস্থিত সকল স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া; পার্বত্য এলাকার সড়ক যোগাযোগের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ (যেমনÑ কালভার্ট নির্মাণ, ছড়া খনন, রাস্তার পার্শ্বে ড্রেন নির্মাণ ইত্যাদি); রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগে গাছ কাটার মেশিন, এক্সকেভেটর, পে-লোডার, ক্রেন, বেইলি ব্রীজ ইত্যাদি যন্ত্রপাতি মজুদ রাখা; পার্বত্য চট্টগ্রামের সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পার্বত্য জেলাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদনের লক্ষ্যে একটি বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ।
প্রসঙ্গত: অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড় ধসের কারণে গত বছর ১২ ও ১৩ জুন রাঙ্গামাটি জেলার ৭টি মহাসড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সারাদেশের সঙ্গে রাঙ্গামাটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময় ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসের কারণে মহাসড়কের ১১১টি স্থানে আংশিক পেভমেন্ট ও সোল্ডার ধসে পড়ে এবং ৩টি স্থানে পেভমেন্ট পুরোপুরি ওয়াশড-আউট হয়ে যায়। ওই ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে জরুরী ভিত্তিতে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। একই সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধান ও পরিবেশগত সমীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বিক সমীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠনের সুপাশি করা হয়েছিল কমিটির ওই সভায়। এ ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নেতৃত্বে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর’-কে অন্তর্ভূক্ত করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত এ কমিটি পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলা সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মত বিনিময়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনা, রাঙ্গামাটিতে ভূমি ধসের পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক তৈরিকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব সুপারিশ প্রণয়ন করেছে বলে সূত্র জানায়।