আতাউর রহমান: আসন্ন ঈদুল আজহার আগে প্রতিবছরই দেশের সীমান্ত বাজারগুলো ভারতীয় গরুতে সয়লাব হয়ে যায়। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কড়াকড়ির কারণে অস্বাভাবিক কমেছে ভারতীয় গরু আমদানি। ভারতীয় গরু কেনাবেচার সীমান্তবর্তী হাটগুলোর কার্যক্রম ছোট হয়ে আসছে ।
জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী দুরাকুটি হাটটি ওই এলাকার মধ্যে সুপরিচিত। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুপুর হতে না হতেই পশুতে ভড়ে উঠত এ হাট। বেচাকেনা চলত রাত ৯টা পর্যন্ত। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা ট্রাকে ভরে নিয়ে যেত এই হাটের কোরবানির পশু। কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে দুই মাস আগে থেকেই জমে উঠত এই হাট। সেই অনুযায়ী এ বছর জুলাইয়ের শুরু থেকেই জমজমাট হওয়ার ছিল দুরাকুটি হাট। কিন্তু ঈদের মাত্র ২০ দিন বাকি, এমন সময়েও এই হাটের চিত্র এবার একদম ভিন্ন। হাটে তেমন গরুই আসছে না।
দুরাকুটি হাটের ইজারাদার জানান, প্রায় ৬০ লাখ টাকায় এক বছরের ইজারা নিয়েছেন এ পশুর হাটটি। গত বছর এমন মৌসুমে আটশ থেকে হাজারটি গরু বিক্রি হলেও এ বছর বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুই থেকে তিনশটি। সীমান্তের কঠোর নজরদারির ফলে সীমান্তের এসব হাটে পশু আমদানি অনেকটা কমেছে। মুনাফা তো দূরের কথা, ইজারা আদায় করা কষ্টকর বলে দাবি করেন তিনি।
গরু না আসার কারণ হিসেবে ব্যাপারীরা জানান, এ হাট থেকে ভারতীয় সীমান্ত খুব কাছে। কাঁটাতারের বেড়াহীন এ সীমান্ত পথে খুব সহজেই প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে গরু পাচার করত একটি চক্র। এর বেশিরভাগ গরু বিক্রি হতো দুরাকুটি ও লালমনিরহাট শহরের নয়ারহাট, বড়বাড়ি ও হাতীবান্ধার দৈ খাওয়াহাট। যার ফলে দিনভর গরু-মহিষে ভরপুর থাকত এসব পশুর হাট।
সীমান্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের আতঙ্কে মাদক বিক্রেতাদের পাশাপাশি গরুর রাখাল ও ব্যবসায়ীরাও বাড়ি ছেড়েছে। সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়শ মানুষ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ছিলেন গরুর ব্যাপারী। এতে ভারতীয় গরু খুব একটা আসছে না। অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে সামান্য কিছু গরু এলেও এর পরিমাণ আগের মতো কোনোভাবেই নয়।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, জেলার ৫টি উপজেলায় তিন লাখ ৪৮ হাজার পশুর মধ্যে কোরবানিযোগ্য রয়েছে ৫৫ হাজার ১৯১টি। গত বছর কোরবানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৮০৯টি পশু। এ জেলার পশু অন্য জেলায় বিক্রি হলেও কোনো ঘাটতি হবে না বলে দাবি করেন তিনি।
বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোর্শেদ জানান, নজরদারির ফলে মাদক ও গরু পাচার যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনি বন্ধ হয়েছে সীমান্ত হত্যা। ভারতের অভ্যন্তরে ভারতীয়রা গরু মজুদ রাখলেও সীমান্ত অতিক্রম করার কোনো সুযোগ নেই। সীমান্তের এ নজরদারি আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।